জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার চিন্তা থেকে নৌকাস্কুল উদ্ভাবন করে দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেন বাংলাদেশি স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ২৭তম ‘গ্লোবাল লাভ অব লাইভস অ্যাওয়ার্ডস’ পেয়েছেন তিনি। বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দেয় তাইওয়ান।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং নিজ কার্যালয়ে রেজোয়ানসহ অন্যান্য বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় প্রেসিডেন্ট লাই চিং বলেন, ‘স্থপতি হিসেবে রেজোয়ান জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর একটি সমাধান তৈরি করেছেন, যা বিশ্বকে উপকৃত করছে। তার ভাসমান স্কুল শিশুদের জন্য আশার সঞ্চার এবং শিক্ষা লাভের সুযোগ নিশ্চিত করেছে।’
নৌকাস্কুলের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে শিক্ষাসুবিধা দেওয়ায় রেজোয়ানকে ‘মেডেল অব অ্যাচিভমেন্টস’ বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে তাইওয়ানের ‘চো তা-কুয়ান কালচারাল অ্যান্ড এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন’ এই পুরস্কারটি দিয়ে আসছে, যা ‘নোবেল লাইফ প্রাইজ’ নামেও পরিচিত।
১৬ সদস্যের জুরি সারা বিশ্ব থেকে মনোনীত প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে রেজোয়ানকে নির্বাচিত করেন।
সিটিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চো চিন-হুয়া বলেন, ‘রেজোয়ানের উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার একটি কার্যকর পদ্ধতি এবং প্রকৃত অর্থেই তিনি বাংলাদেশের আর্থ হিরো। আমাদের পুরস্কার গত দুই দশকব্যাপী পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও জলবায়ু অভিযোজনে তার অবদানের স্বীকৃতি দেয়।’
পুরস্কার প্রাপ্তির পর অনুভূতি ব্যক্ত জানিয়ে রেজোয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের মতো তাইওয়ানের জনগণও রেসিলিয়েন্ট, প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে তারা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্নির্মাণ করেছে। তারা আমাদের ফরমোজার (তাইওয়ান) নদীতে একটি নৌকাস্কুল তৈরি করতে বলেছে। আমরা বাংলাদেশিরা এভাবে আরো অনেক জীবন বদলে দেওয়া সৃজন-উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নানা সংকটের সমাধান বের করতে সক্ষম হব।’
২০০২ সালে রেজোয়ান চলনবিলের অথৈ পানিতে ভাসান তার অনবদ্য উদ্ভাবন ‘নৌকাস্কুল’। নৌকায় ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি রয়েছে ভাসমান লাইব্রেরি, খেলার মাঠ ও স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক এবং কিশোরী-তরুণীদের জন্য রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রেজোয়ানের এই অনন্য উদ্ভাবন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আরো ৮টি দেশে।
বাংলাদেশ সরকার তার এ উদ্ভাবনকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (২০২৩-২০৫০) অন্তর্ভুক্ত করে। ইউনিসেফ, ইউএনইপি ও ইউএনডিপির মতো জাতিসংঘের বিভিন্ন তহবিল ও কর্মসূচি তার এই উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘আর্থ হিরোজ’ নামের প্রখ্যাত ব্রিটিশ গ্রন্থে বিশ্বের ২০ জন ‘আর্থ হিরো’র তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়েছে রেজোয়ানের নাম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, তাইওয়ানসহ বিশ্বের নানা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকে রেজোয়ান ও তার ভাসমান স্কুল বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।