সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে হামের ভ্যাকসিন কম কার্যকর বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।
সোমবার (১৩) গবেষণাপত্রটি নেচার জার্নালের মাইক্রোবায়োলজি (অণুজীববিজ্ঞান) বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে। এদিন টেলিগ্রাপের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণামূলক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিজারিয়ান শিশুদের ক্ষেত্রে টিকা কম কার্যকর হওয়ার মানে হচ্ছে- প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণের পরও শিশুর রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা হামের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করতে না পারা। এই কারণে শিশুরা এই রোগের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল থাকে। তবে, হামের দ্বিতীয় ডোজের টিকা সিজারিয়ান এসব শিশুদের শরীরে দিলে হামের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলে।
গবেষণাপত্রটির কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও যুগ্ম প্রধান লেখক হেনরিক সালজে বলেন, সিজারিয়ান অনেক শিশুর হামের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় না, যা শিশুর নিজের জন্য ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য বিপজ্জনক। কারণ সিজারে জন্ম নেওয়া শিশুর শরীরে প্রথম ডোজের টিকার সেভাবে কোনো কার্যকারিতা থাকে না। তাই সিজারে জন্ম হওয়া শিশুদের দ্বিতীয় ডোজের হামের টিকা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার পরও শিশুর হাম হলে, অভিভাবকরা আর দ্বিতীয় ডোজ দিতে আগ্রহী হয় না।
গবেষক সালজে বলেন, স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুদের মতো সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুরা একইভাবে মায়ের মাইক্রোবায়োমের সংস্পর্শে আসে না। ফলে তাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বিকাশে বেশি সময় লাগে। এ কারণে হামসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এসব শিশুকে অবশ্যই পূর্ণ ডোজ টিকা দিতে হবে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলো থেকে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে মাত্র ৮৯.১ শতাংশ শিশু তাদের হাম, মাম্পস এবং রুবেলা (এমএমআর) ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দুই বছর বয়সের মধ্যে পেয়েছে এবং পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে মাত্র ৮৫ শতাংশ দুই ডোজ পেয়েছে। যেখানে হাম নিয়ন্ত্রণে জনসংখ্যার অন্তত ৯৫ শতাংশ শিশুকে এই টিকা দেওয়া দরকার।
এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য চীনের হুনান প্রদেশের ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি শিশুর পূর্ববর্তী গবেষণার ডেটা ব্যবহার করেন গবেষকরা। জন্ম থেকে ১২ বছর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে এসব শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মাধ্যমে জীবনের প্রথম কয়েক বছরে তাদের রক্তে হামের অ্যান্টিবডির মাত্রা কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা দেখা যায়। এ ছাড়া টিকা দেওয়া পরও অ্যান্টিবডির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, হামের টিকা নেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া ৫ শতাংশ শিশুর মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি। বিপরীতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া ১২ শতাংশ শিশুর মধ্যে প্রথম ডোজের টিকার কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রথম টিকার বিপরীতে তুলনামূলক কম প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৩ সালে হামের টিকা আবিষ্কার হয়। ১৯৭১ সালে এটি সহজলভ্য হয়। এর আগে কয়েক বছর পরপর হাম মহামারির আকার ধারণ করত। হামের প্রাদুর্ভাবে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হতো।