27 C
Dhaka
Saturday, September 14, 2024

মাদ্রাসা থেকে দুই ছাত্র কি হাওয়া হয়ে গেল?

চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিনের মতো সেদিনও ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে রাজধানীর চকবাজার দারুল উলুম ইসলামবাগ মাদ্রাসার ছাত্র মো. আলী হোসেন (১৮) ও মো. আব্দুল্লাহ (১২)। এরপর মাদ্রাসায় সকালের পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের মতোই কাজ করতে থাকে তারা। তবে সকাল ১০টা থেকে হুট করে তাদের আর মাদ্রাসায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশপাশে খোঁজ নিয়েও তাদের সন্ধান মেলেনি। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত চার মাসে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেলেও ওই দুই শিক্ষার্থীর সন্ধান বের করা সম্ভব হয়নি।

নিখোঁজ আলী হোসেনের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচর এবং আব্দুল্লাহর বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে। তারা দুজনই ওই মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগে পড়াশোনা করত। হঠাৎ করে নিখোঁজ হওয়া এবং দীর্ঘদিন পরও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় দুই পরিবারে নেমে এসেছে শঙ্কা আর হতাশার অন্ধকার। সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে বাবা-মায়েদের। এখন তাদের শুধু একটাই আশা, যেন অক্ষতভাবে ফিরে আসে সন্তানরা।

আরো পড়ুন  কোটা আন্দোলন: জবিতে নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগ ছাড়ার হিড়িক

জানা যায়, দারুল উলুম ইসলামবাগ মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনা করে আসছিল আলী হোসেন ও আব্দুল্লাহ। এর মধ্যে আলী হোসেনের পড়াশোনা প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। নিখোঁজ হওয়ার সময়ের কয়েক মাস পরই তার বাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২ ফেব্রুয়ারি সকালে মাদ্রাসার সামনে থেকে তারা নিখোঁজ হয়ে যায়। তবে সেদিন তাদের কোনো ব্যাগ বা অন্য কিছু নিয়ে কেউ বের হতে দেখেনি।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনার দুদিন পর ৪ ফেব্রুয়ারি চকবাজার থানায় জিডি করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে থানায় বারবার যোগাযোগ করা হলেও ওই দুজনের হদিস মেলেনি। পরে তাদের সন্ধান পাওয়ার জন্য গত মাসে পিবিআইয়ে আবেদন করা হয়। এখন পর্যন্ত সেখান থেকেও আশানুরূপ কিছু পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন  শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া নিয়ে যা বললেন ব্যবসায়ী নেতা

মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. রাসেল কালবেলাকে জানান, বয়সে ছোট-বড় হলেও আলী হোসেন ও আব্দুল্লাহর মধ্যে অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। হুট করে তাদের এই নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের সবার কাছেই খুব আশ্চর্যজনক।

তিনি বলেন, তারা দুজন কাউকে কিছু না বলেই সেদিন সকালে বের হয়। আলী হোসেনের কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল। কিন্তু ১১টার পর থেকে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে সিম বন্ধ। তারাও আর কাউকে ফোন করেনি আর আমরাও তাদের কোনো সন্ধান পাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়েছি, জানিয়েছি বিষয়গুলো।

আলী হোসেনের বাবা আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, ঘটনার পর আমরা বিভিন্নভাবে তাদের খোঁজ জানার চেষ্টা করেছি। পুলিশের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনেও কোনো খোঁজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমরা পিবিআইর দ্বারস্থ হয়েছি।

আরো পড়ুন  সন্ধান মিলল ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউরের

তিনি বলেন, আর কয়েকদিন পরই আমার ছেলের বাড়িতে আসার কথা ছিল। কেন এ রকম একটা ঘটনা ঘটল, কিছুই বুঝতে পারছি না।

নিখোঁজ আব্দুল্লাহর বাবা মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এর আগে আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে বাড়িতে চলে এসেছিল। পরে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমরা পাঠাই। এরপর ভালোই চলছিল। এত ছোট মানুষ বাইরে কোথায় কীভাবে আছে, কিছুই তো জানি না। পালিয়ে গেলে তো এতদিনে অন্তত ফিরে আসার কথা ছিল।

চকবাজার থানার ওসি কাজী সাহেদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ঘটনাটির অগ্রগতি কতটুকু, তা জেনে আমি জানাতে পারব।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার নলেজে নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।

সর্বশেষ সংবাদ