28 C
Dhaka
Saturday, November 23, 2024

বাংলাদেশিদের তথ্য বিক্রি করে দিয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা

অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের বিভিন্ন গ্রুপ ও চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘ক্লাসিফায়েড’ তথ্য বিক্রি করে দিয়েছেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। দেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফোন কলসহ ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করেছেন তারা। বিষয়টি নজরে এলে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)।

শুক্রবার (৭ জুন) এনটিএমসি ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এনটিএমসি’র সূত্রে জানা গেছে, ৪২টি সরকারি সংস্থার প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা এনআইপি’তে প্রবেশাধিকার পান। বিভিন্ন সরকারি সেবা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাজে প্রবেশাধিকার প্রয়োজন হয় তাদের। এনআইপি’তে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) থাকে। প্রবেশাধিকার প্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজেদের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে এই পোর্টালে প্রবেশ করেন।

লগ সার্ভার বিশ্লেষণ করে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন ও র‍্যাব-৬ এর এএসপি তারেক আমান বান্নার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অস্বাভাবিক লগ-ইন দেখতে পায় এনটিএমসি। সেখান থেকেই তথ্য চুরির ঘটনাটি জানতে পারে এনটিএমসি।

আরো পড়ুন  ‘আর যেন বাল্যবিয়ে দিবস পালন করতে না হয়’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লেখা চিঠিতে এনটিএমসি জানিয়েছে, হাজার হাজার সদস্য আছে ৪৮টি টেলিগ্রাম গ্রুপ ও চ্যানেল এসব ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রিতে জড়িত। এসব গ্রুপের সদস্যদের সংবেদনশীল তথ্যে প্রবেশাধিকার পেতে দুই কর্মকর্তার লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ও মেসেজিং অ্যাপে বিক্রি হওয়া কল ডেটা রেকর্ড এনটিএমসির সার্ভার থেকে নেওয়া হয়েছে।

সংবেদনশীল তথ্যের অননুমোদিত ব্যবহার এবং অবৈধভাবে হস্তান্তরের যথাযথ তদন্ত শেষে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে এনটিএমসি।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২৫ এপ্রিল রাত ৮টা ৫৭ মিনিট থেকে ৯টা ২৭ মিনিটের মধ্যে লগইন রিপোর্টে প্রথম এটি নজরে আসে। ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে এই দুই পুলিশ ও র‍্যাব কর্মকর্তার আইডি অন্য যে কোনো ব্যবহারকারীর চেয়ে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করে।

আরো পড়ুন  ঝিকরগাছায় আ.লীগ নেতাসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা

গত ২ মে এনটিএমসিকে লেখা চিঠিতে এটিইউ বলেছে, প্রাথমিক তদন্তে এটিইউ জানতে পেরেছে, সাইবার ক্রাইম উইংয়ের কনস্টেবল মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র রায় ও অপারেশন উইংয়ের খায়রুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে কল ডিটেল রেকর্ডসহ স্পর্শকাতর তথ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত। কনস্টেবলরা জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করেছেন।

গত ২৯ এপ্রিল সাইবার ক্রাইম উইং এর দুই কনস্টেবল মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এবং অপারেশন্স উইং এর খায়রুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এসপি ফারহানার লগইন ক্রেডেনশিয়ালের মাধ্যমে অননুমোদিত তথ্য স্থানান্তরের প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।

র‍্যাব জানিয়েছে, র‍্যাব-৬ এর ওই কর্মকর্তাকে ক্লোজড করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে তদন্ত চলছে।

আইনগতভাবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্ত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করার অধিকারী এনটিএমসি।

প্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বাকের বলেন, ‘বিডি সাইবার গাং’ নামক টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ একাধিক টেলিগ্রাম চ্যানেল, ফেসবুক গ্রুপ এবং হোয়াটস অ্যাপে সংগৃহীত তথ্য বিক্রি করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা এসব গ্রুপের এডমিনদের তথ্য সরবরাহ করতেন। ইন্টারনেটের বিক্রির বিষয়টি সেসব এডমিনরা দেখভাল করতেন। তবে ঠিক কত সংখ্যক নাগরিকের কী পরিমাণ তথ্য এভাবে অনলাইনে বিক্রি হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি জেনারেল বাকের।

আরো পড়ুন  ১০ লাখ টাকা বাকি খেয়ে লাপাত্তা রাবি ছাত্রলীগ

এ বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তথ্য বিক্রির প্রমাণ পায় এনটিএমসি। এর প্রেক্ষিতে দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এনআইপি’তে পুলিশের এটিইউ এবং র‍্যাব-৬ এর প্রবেশাধিকার বন্ধ রেখেছে এনটিএমসি।

এনটিএমসি’র ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‌‘বিষয়টি সঠিক। আমাদের নজরে এলে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ওই দুই সংস্থার প্রবেশাধিকার (সাময়িকভাবে) বন্ধ রাখা হয়েছে। দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ এবং র‍্যাবকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানি।’

সর্বশেষ সংবাদ