19 C
Dhaka
Thursday, December 12, 2024

চোখ রাঙাচ্ছে হিজবুল্লাহ, ইসরাইলের কী করা উচিত?

গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা যত বাড়ছে, ইসরাইলের উত্তর সীমান্তে আরও বিপজ্জনক কিছুর ইঙ্গিত মিলছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পরদিন থেকেই উত্তর ইসরাইলে রকেট এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননে অবস্থিত ইরানের আরেক প্রক্সি মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ। হামলার আগুনে পুড়েছে হাজার হাজার একর জমি। এতে উচ্ছেদ হওয়া ৭০ হাজার ইসরাইলি এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) পাল্টা আঘাত হানছে, তাদের হামলার কারণে দক্ষিণ লেবাননের ৯০ হাজার মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গত ৩ জুলাই একজন প্রভাবশালী হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যা করে ইসরাইল। এসবের জেরে একটি সরাসরি যুদ্ধ এই অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

ইসরাইলের কাছে এই মুহূর্তে ‘হিজবুল্লাহর হুমকি’র ভালো কোনো উত্তর নেই। তার মানে, এই মুহূর্তে তাদের যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।

ইসরাইলের জন্য হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে হুমকি নতুন নয়, তবে তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন গুরুতর। ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ বসবাসের অযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইহুদি রাষ্ট্রটিকে একটি অসহনীয় অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

বোঝাই যাচ্ছে, ইসরাইলিরা তাদের সীমান্তে এমন শত্রুর উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ, যারা ‘হামাস-স্টাইল’র আক্রমণের কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০০৬ সালে লেবাননে ইসরাইল যে আক্রমণ চালিয়েছিল তার লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে দূরে ঠেলে দেয়া। এর ফলে ৩৪ দিনের একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়ায় দু’পক্ষ।

আরো পড়ুন  লন্ডনে আলিশান বাড়িতেই থাকছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান

ইসরাইল মনে করে, ওই যুদ্ধে তারা মিলিশিয়া গোষ্ঠীটিকে দুর্বল করতে সক্ষম হয়েছে। এখন সেখানে নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কিছু কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন যে, এই যুদ্ধ যদি সত্যিই বেধে যায় তাহলে এর ধ্বংসযজ্ঞ দেখলে গাজাকে তখন ‘স্বর্গের’ মতো মনে হবে।

প্রকৃতপক্ষে, এখন আরেকটি যুদ্ধ ইসরাইল এবং লেবানন উভয়ের জন্যই মারাত্মক বিপর্যয়কর হবে। ২০০৬ সালের তুলনায় হিজবুল্লাহর অস্ত্রশস্ত্র এখন অনেক শক্তিশালী। তাদের অস্ত্রাগারে ১ লাখ ৫০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে কিছু তেল আবিবেও আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলো ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা সবসময় একটি সংক্ষিপ্ত তবে তীক্ষ্ণ যুদ্ধের কথা বলেন। কিন্তু ১৯৮২ সালে আগ্রাসন চালাতে গিয়ে কাদায় আটকে গিয়েছিল আইডিএফ। এমনকি ২০০৬ সালেও প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে হিজবুল্লাহ। নতুন যুদ্ধে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে, কারণ হিজবুল্লাহ গ্রাম এবং শহরগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘাঁটি গেড়েছে। দেউলিয়া লেবানন রাষ্ট্রটি ভেঙে পড়তে পারে, সৃষ্টি হতে পারে চরম বিশৃঙ্খলা। এখন সেখানে একটি সংঘাত ইরান এবং তার প্রক্সিদের জড়িয়ে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ একটি ‘অসীম’ যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আর ইরান একটি ‘নিশ্চিহ্ন’র (ইসরাইলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকি দেয় ইরান) যুদ্ধের কথা বলছে।

আরো পড়ুন  নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা থেকে বেনি গানৎসের পদত্যাগ

এসব কারণে ইসরাইলি নেতাদের পিছু হটা উচিত। তারা বলছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে গাজা যুদ্ধের তীব্রতা কমে আসবে; যা নাসরাল্লাহর জন্য উত্তর ইসরাইলে উত্তেজনা কমানোর অজুহাত হতে পারে। তিনিও সাময়িক বিরাম পেয়ে খুশি হতে পারেন, কারণ গত কয়েক মাসে তিনি শত শত যোদ্ধা হারিয়েছেন। এরই মধ্যে উত্তর সীমান্তে প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করেছে আইডিএফ; যা অন্তত হামাসের মতো আকস্মিক আক্রমণের শঙ্কা কমিয়েছে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে হিজবুল্লাহ যে হুমকি সৃষ্টি করেছে তা যেকোনো দেশের জন্যই অসহনীয় হতো। এক্ষেত্রে কূটনীতির সাহায্য নিতে পারে ইসরাইল। ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর জাতিসংঘে পাস হওয়া একটি রেজোল্যুশ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ইসরাইলি সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে লিতানি নদীর উত্তরে থাকতে বলে। কিন্তু এটি হিজবুল্লাহর রকেট থেকে ইসরাইলকে কোনো সুরক্ষা দেয় না। এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহ জাতিসংঘের সেই রেজোল্যুশন মেনে চলার বিষয়ে খুব কমই আগ্রহ দেখিয়েছে। লেবাননের সেনাবাহিনী এবং জাতিসংঘের সৈন্যরাও এটি কার্যকর করতে অতটা ইচ্ছুক নন, হয়তো সক্ষমও নন; যা দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার প্রশমনের পথে অন্তরায়।

আরো পড়ুন  লেবাননের হামলায় ইসরায়েলের ৩১ সেনা আহত

ইসরাইলের এখন সবকিছু নতুন করে বিবেচনা করা উচিত। একটি উপায় হতে পারে গাজায় পরবর্তী দিনগুলোর জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আলোচনা। এটি করতে পারলে ইসরাইল গাজা এবং পশ্চিম তীর থেকে সেনা স্থানান্তরের সুযোগ পাবে।

ইসরাইলকে আমেরিকার সঙ্গেও সম্পর্ক মেরামত করতে হবে। যার সামরিক সমর্থন হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোসহ ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষায় সহায়তা করে।

সর্বশেষ, ইসরাইলকে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ, বিশেষ করে ইরানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে সাহায্য করবে। ইসরাইল হিজবুল্লাহকে চাইলেই নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। কিন্তু তারা যদি গাজায় চিরকালের জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, প্রতিবেশীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং আমেরিকার সঙ্গে ঝগড়া করে তাহলে হিজবুল্লাহ ধরেই নেবে যে, ইসরাইল অতটা শক্তিশালী নয়, যতোটা তারা দেখায়!

সর্বশেষ সংবাদ