মূল ফটকে লেখা বৃক্ষমেলা-২০২৪ অথচ মেলায় বসা ৩৯ টি দোকানের মধ্যে একটি মাত্র বৃক্ষের দোকান। একদিকে বন বিভাগ বলছে, মেলার আয়োজন করেনি তারা। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে মেলাটি বনবিভাগের, তারা শুধু সার্বিক সহযোগিতায় করছেন। বৃক্ষমেলার নামে এমন আয়োজন মানতে পারছেন না সচেতন মহল।
জানা যায়, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ প্রাঙ্গণে ১৫ দিনের মেলার আয়োজন করা হয়। যা ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৫ জুলাই শেষ হবে। ইতোমধ্যে মেলায় বসা ৩৯ টি দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, ফুসকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনীসহ শিশুদের খেলনা ও রাইড।
মেলার এক কোণে পড়ে রয়েছে মান্নান নার্সারী নামের শুধুমাত্র একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান। মেলায় বসা দোকানীদের কোনো প্রকার ভাড়া নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে দোকানদের মধ্যে অনেকেই বলছেন প্রতিদিন ১ হাজার বা তার চেয়ে কিছু কমবেশি ভাড়া দিতে হবে আয়োজক কমিটিকে।
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, মেলার মাঠের প্রধান অংশসহ পুরো জায়গা জুড়ে ফুসকা, চটপটি, আঁচার, কসমেটিকস, প্রসাধনী, দা-বটির দোকান। মেলায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীরা সেসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন এবং কেনাকাটা করছেন। তবে চারা বিক্রির দোকানটিতে তেমন কোনো ভিড় ছিল না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার টাকার গাছের চারা বিক্রি না হলেও অন্যসব দোকানে মালিকদের গড় বিক্রি ছিলো ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
আনোয়ার হোসেন নামের বিক্রেতা বলেন, এখানে মোট ১৫ দিন মেলা হওয়ার কথা রয়েছে। এখনো পর্যন্ত আমার কাছ থেকে কেউ কোনো ভাড়ার টাকা উঠায়নি। তবে তাদের ভাড়া দিতে হবে। রাইডের মালিকসহ কয়েকজন দায়িত্বে রয়েছে। তারা আমাদের থেকে ভাড়া নিয়ে মেলার আয়োজকদের বুঝিয়ে দিবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আমাদের বেচা বিক্রি কম। মেলায় আয়োজক কমিটিকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। বিক্রি না হলে, ভাড়া দিয়ে আমাদের তেমন লাভ হবে না।’
মেলায় বসা একমাত্র নার্সারিটির মালিক মো. মান্নান হাওলাদার বলেন, ‘আমার মূল নার্সারী মাদারীপুরে। তবে একটি বাগান শরীয়তপুরের পশ্চিম কোটাপাড়া এলাকায়ও রয়েছে। বৃক্ষমেলায় একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান, বিষয়টি তেমন ভালো দেখায় না। অন্য নার্সারি মালিকদের আসতে বলা হলেও, তারা আসেনি।’
বৃক্ষ কিনতে আসা ব্যক্তিরা বলেন, ‘বৃক্ষ মেলার কথার শুনে ভেবেছিলাম, এখানে অনেক গাছের দোকান বসবে। কিন্তু একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান বসায় তেমন গাছ নেই। এই মেলা দেখে মনে হচ্ছে, এটি কোনো বাণিজ্য মেলা।’
মেলার আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে গোসাইরহাটে কোনো বৃক্ষ মেলায় আয়োজন করা হয়নি। শুনেছি নার্সারি মালিক সমিতি, উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মেলায় আয়োজন করেছে। তাছাড়া মেলা আয়োজন করার মতো আমাদের এখন কোনো বাজেট নেই।’
তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি মেলাটির আয়োজন করেছে বন বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে, তা মূল ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাটিকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। আর ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।