17 C
Dhaka
Saturday, January 11, 2025

‘তোর কোন পায়ে গুলি করব, ডান পায়ে না বাম পায়ে?’

নিজ কক্ষে তিন ঘণ্টা যাবত আটকে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের এক নেতা ও তার বন্ধুকে মারধর ও নির্যাতনের পাশাপাশি পিস্তল দেখিয়ে পায়ে গুলি করার হুমকির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবসহ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে।

সোমবার (৬ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য নাফিউল ইসলাম জীবন ও তার বন্ধু ইউনুস খান। নাফিউল বর্তমানে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অপরদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, সহ-সভাপতি মনু মোহন বাপ্পা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম সাদিক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নাফিউল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে আমি ও আমার বন্ধু মিলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় দেখি ছাত্রলীগের তিনজন নেতা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনু মোহন বাপ্পা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম সাদিক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ আমাদের পেছনে এসে দাঁড়ায়। তাদের দেখে আমরা ক্যাম্পাস থেকে বাইক নিয়ে চলে আসছিলাম। আসার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়া আবাসিক এলাকায় তারা আমাদের পথ রোধ করে তাদের বাইকে আমাকে তুলে নেয়। এরপর তারা আমাকে মাদার বখশ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়।

আরো পড়ুন  প্রজ্ঞাপন জারিতে আলটিমেটাম ৩৫ প্রত্যাশীদের | কালবেলা

তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ওই কক্ষে আসেন। এসময় সে আমাকে দলীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এক পর্যায়ে সে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে চড়-থাপ্পর ও মাথার উপরে কিল-ঘুষি মারে। এরপর সে একটা পিস্তল বের করে। পিস্তলটিতে তিনটা গুলি লোড-আনলোড করতে করতে আমাকে বলে, ‘তোর কোন পায়ে গুলি করব, ডান পায়ে না বাম পায়ে’। এমন করতে করতে সে একবার শুট করে। তবে গুলি তখন আনলোড করা ছিল। এছাড়া তারা জোরপূর্বক আমার মোবাইল চেক করে। পরবর্তীতে রাত ১টার দিকে তারা আমাকে সহকারী প্রোক্টরদের হাতে তুলে দেন।

আরো পড়ুন  শেখ মুজিব ১৫ বছর সময় পেলে হাসিনাকেও ছাড়িয়ে যেতেন : মাহমুদুর রহমান

এ ঘটনায় শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, দেশ থেকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গণতন্ত্র আবার প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা শত বাঁধা নির্যাতন সহ্য করে লড়াই চালিয়ে যাবো। একা পেয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছাত্রদলের কর্মীকে নির্যাতন করে সন্ত্রাসীদের সংগঠন ছাত্রলীগ কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছে। সেই সাথে ছাত্রলীগ প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত আহত এবং নির্যাতন করছে। আর এতে রাবি প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আমি প্রোক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘ওই ছেলেকে কোনো ধরনের মারধর, হুমকি কিংবা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এর আগে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা লাগিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আমরা তাই সন্দেহজনকভাবে তাকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। পরে তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করেছি।’

আরো পড়ুন  ছাত্র কল্যাণের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে পেটানোর অভিযোগ ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে 

পিস্তল দেখিয়ে পায়ে গুলি করার হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। কারণ অস্ত্রের রাজনীতি ছাত্রদল করে, এটা ছাত্রলীগ করেনা। ছাত্রলীগের হাতে কলম থাকবে, অস্ত্র না।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ফোন পেয়ে আমি ওই হলে দুজন সহকারী প্রোক্টরকে পাঠাই। তারা সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে বিনোদপুরে পৌঁছে দেয়। এ ঘটনায় মারধর কিংবা নির্যাতনের আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। মারধরের ঘটনার প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযোগ করলে আমি বিষয়টি দেখব।

সর্বশেষ সংবাদ