দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ দিয়েছে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে এ তথ্য জানা যায়। রোববার (১১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১২টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি তাকে শপথ পড়াবেন।
আইন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
গত মাসে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রধান পদত্যাগের পর ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তারই স্থলাভিষিক্ত হলেন সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
পরিবার
সৈয়দ রেফাত আহমেদের জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তিনি বাংলাদেশের প্রথিতযশা সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নী জেনালের ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ ও ড. সুফিয়া আহমেদের ছেলে। ভাষা সৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. সুফিয়া আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির মা।
ইশতিয়াক-সুফিয়া দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান সৈয়দ রেফাত আহমেদ। দ্বিতীয় সন্তান ডাক্তার রায়না আহমেদ ইংল্যান্ডে বসবাস করেন বলে প্রধান বিচারপতির পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির পিতা ইশতিয়াক আহমেদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খান ডেইলি স্টারকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতির পিতার ঐতিহাসিক অবদান আছে।
তিনি জানান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ইশতিয়াক আহমেদের সুতীক্ষ্ণ যুক্তির ভিত্তিতে ১৯৯০ এবং ১৯৯৬ সালে সাপ্তাহিক যায় যায় দিন, ১৯৯০ সালে সাপ্তাহিক রোববার, সাপ্তাহিক খবরের কাগজ এবং দৈনিক মানব জমিন প্রকাশ বন্ধ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালত রায় প্রদান করেছিলেন।
‘ইশতিয়াক আহমেদ গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পক্ষাবলম্বন করার জন্য জনগণের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। এরশাদের শাসনামলের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বক্তব্য ও সক্রিয় সংগ্রামের জন্য নবনিযুক্ত প্রধান বিচাপতির বাবা ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে কারাভোগ করেন,’ জানান আরিফ খান।
শিক্ষাজীবন
সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এএলবি(অনার্স) উত্তীর্ণ হন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ পাস করার পর যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্ট ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব ল এন্ড ডিপ্লোমেসি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশাজীবন
২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ২০০৫ সালে স্থায়ী হন সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর আগে ১৯৮৪ সালে জেলা জজ আদালত, ১৯৮৬ সালে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০২ সালে সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন।
তিনি ‘গ্লোবাল জুডিশিয়াল ইনস্টিটিউট অন এনভাইরনমেন্ট, ব্রাজিল’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আইনজীবী এবং বিচারক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত ও কর্মসূত্রে অন্তত ২৫টি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির।