কৃষিবিদদের জন্য গড়া প্রতিষ্ঠান কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের ভবন দখলে নিয়ে, রীতিমতো নিজেদের রাজনৈতিক কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছে বিএনপির দুই নেতা। তারা হলেন, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আহ্বায়ক রাশিদুল হাসান হারুন। শুধু দখলই নয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টির ঘোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত দুই নেতা।
সাধারণ কৃষিবিদরা বলছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে একটি গ্রুপের কাছে জিম্মি ছিল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন। এ কারণে সাধারণ কৃষিবিদরা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আসতে ভয় পেতো। আমরা আশা করেছিলাম, আওয়ামী লীগ পতনের পর এই দখলবাজদের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু তার আর হলো না। আওয়ামী লীগ পতনের পর দখলবাজরা পালিয়ে গেলেও নতুন আরো একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। যারা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনটিকে নিজের বাসা বাড়ি বানিয়েছেন। দখলে নিয়েছেন বিভিন্ন কক্ষ। চাঁদা তুলছেন নিয়মিত।
বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান আশিক বলেন, শামীমুর রহমান শামীম ও রাশিদুল হাসান হারুন বিএনপির একাংশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট দখল করেছে বাবাজি এবং উল্টাপাল্টা কার্যকলাপ পরিচালনা করছে। আমাদের যে আন্দোলন ছিল সাধারণ জনতার জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য, সাধারণ কৃষিবিদদের জন্য, সেই জায়গা থেকে আমরা কৃষিবিদ ও শিক্ষকদের নিয়ে দখলদারদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব।
বাইরে থেকে ঢাকায় আসা কৃষিবিদদের জন্য বেশ কয়েকটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে, যেগুলো নির্ধারিত মূল্যে ভাড়া দেয়া হতো। এখন সেই কক্ষগুলো বাসাবাড়ির মতো ব্যবহার করছে কয়েকজন ব্যক্তি। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায়ই থাকছেন। ডরমেটরি, জিমনেশিয়ামসহ সবকিছু ব্যবহার করছেন ইচ্ছেমতো।
প্রতিষ্ঠানটিতে সেমিনারসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ থাকলেও সেটা এখন করা হচ্ছে না। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের আয়ের প্রধান ও একমাত্র খাত এটি। দুইএকটি আয়োজন করা হলেও সে টাকার কোন হিসাব মিলছে না।
বেশ কয়েকবছর আগে বিএনপি সমর্থিত এগ্রিকালচারাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর আহবায়ক কমিটি গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। এ কারণে এডহক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কৃষিবিদ সেক্টরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য এ্যাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত কৃষিবিদদের সংগঠন এগ্রিকালচারাল ফোরাম অব বাংলাদেশ এর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা শুধু দেখে যাচ্ছি। কীভাবে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান দখল চলছে। এটি সবার প্রতিষ্ঠান, কিন্তু দখল ছাড়া আমরা কিছুই দেখছি না। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। বিএনপির হাইকমান্ডে এ বিষয়ে অভিযোগ জনানো হবে।
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র সদস্য কৃষিবিদ ড. মোহা. মাসুদুল হক ঝন্টু বলেন, আমরা সব ধরণের দখলবাজি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে। যারা এসব করে পেশাজীবী কৃষিবিদদের সুনাম নষ্ট করছেন, এর দায় তাদেরই নিতে হবে। এগুলো কঠোর হস্তে দমন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। অচিরেই এসব দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনা হবে, প্রয়োজন হলে সাধারণ মিটিং করে এডহক কমিটি গঠন করা হবে। এ বিষয়ে দেশে এবং বিদেশে অবস্থানরত সকল কৃষিবিদদের ঐক্যবদ্ধ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন ড. মাসুদুল হক।
এদিকে এগ্রিকালচারিসট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর আহবায়ক জনাব রাশিদুল হাসান হারুনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাথে আতাতের খবরে ক্ষুদ্ধ হয়েছে বিএনপি সমর্থিত কৃষিবিদগণ। কৃষকলীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনের সাথে মিলেমিশে ব্যবসায়িক নানা অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন। ওভারশিস ট্রেডিং কর্পোরেশন নামে জয়েন্ট স্টক থেকে করা একটি কোম্পানীর মালিক তারা।
প্রথমে রাশিদুল হাসান হারুন ও মিসেস শাহনাজ হাসান কোম্পানি চালু করলেও পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের ওই শীর্ষ দুই নেতাকে এই কোম্পানিতে বেশি শেয়ার দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ শাসনামলে দীর্ঘ ১৫ বছর মিলেমিশে ব্যবসা করেছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামীলীগ শাসনামলে আওয়ামী লীগের দুই নেতার নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করেছেন, এখন রাশিদুল হাসান বিএনপিপন্থি হওয়ায় তার নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে রাশিদুল হাসান বলেন, স্বৈরশাসনের অবসানের পর আমরা এ জায়গায় নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছি। দখলদারিত্বের প্রশ্নই উঠে না।
শামীমুর রহমান শামীম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। কৃষিবিদরা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অবস্থান করছি, অঘটন ঘটানোর জন্য নয়।