রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে রাহানুমা সারাহ (৩২) নামের এক গণমাধ্যমকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে স্থানীয়রা তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাহানুমা সারাহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জি-টিভির নিউজরুম এডিটর ছিলেন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুরে। সারাহ ওই এলাকার বখতিয়ার শিকদারের মেয়ে। স্বামী সায়েদ শুভ্রর সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর কল্যাণপুরের ভাড়া বাসায়।
গণমাধ্যমকে সায়েদ শুভ্র জানিয়েছেন, সাত বছর আগে প্রেম করে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন তারা। মরদেহ উদ্ধারের আগে তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি। তবে কিছুদিন আগে থেকে রাহানুমা আলাদা হয়ে যেতে চাইছিলেন। কাজী অফিসে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্নের কথা থাকলেও দেশের পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেটি করা হয়নি।
তবে হঠাৎ রাহানুমা সারাহ’র মরদেহ উদ্ধার নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, লেকের পানিতে রাহানুমার নিথর দেহ ভাসছিল। পথচারীরা দেখতে পেলে উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে যান। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।
এদিকে, রাত পৌনে ২টার দিকে মরদেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুটি পোস্ট করেছিলেন রাহানুমা সারাহ। যারমধ্যে একটি পোস্ট দিয়েছেন রাত ১১টা ৬ মিনিটে। ওই পোস্টে ফাহিম ফয়সাল নামের একজনের সঙ্গে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির সামনে দেখা যায়।
সেই পোস্টের ক্যাপশনে রাহানুমা সারাহ লিখেছিলেন, ‘আপনার মতো একজন বন্ধু পেয়ে ভালো লাগলো। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সর্বদা আশীর্বাদ করুন। আশা করি শিগগিরই আপনি আপনার সব স্বপ্ন পূরণ করবেন। আমি জানি, আমরা একসঙ্গে অনেক পরিকল্পনা করেছি। দুঃখিত আমাদের সেই পরিকল্পনা পূরণ করতে পারিনি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে আশীর্বাদ করুন।’
এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে ফাহিম ফয়সাল নামের যে ব্যক্তির সঙ্গে রাহানুমা সারাহকে দেখা যায় তারও একটি মন্তব্য রয়েছে। যেখানে তিনি লিখেছেন- ‘আমার এ পর্যন্ত মেশা সবচেয়ে ভালো বন্ধু আপনি, এই বন্ধুত্ব ধ্বংস করবেন না! নিজের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না!’
রাত ১১টা ৬ মিনিটে এই স্ট্যাটাস দেয়ার ঠিক ১২ মিনিট আগেও একটি পোস্ট দিয়েছিলেন রাহানুমা সারাহ। রাত ১০টা ৫৪ মিনিটে দেয়া ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’