হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১২ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে তিনি তাদের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আবহমানকাল ধরে দুর্গাপূজা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। কয়েক শতাব্দী ধরে উৎসবটি সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও দুর্গাপূজা সবসময় উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়। আর উৎসব হচ্ছে অন্ধকারের গহন থেকে আলোকের উদ্ভাসন। উৎসব যে ধর্মেরই হোক, উৎসবের প্রাঙ্গণ সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত।
তারেক রহমান বলেন, উৎসবের প্রাঙ্গণের দরজা কখনোই বন্ধ থাকে না। যে কোনো ধর্মীয় উৎসব মানুষে মানুষে নিবিড় বন্ধন রচনা করে, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরিত হয়। সব ধর্মের মর্মবাণী দেশপ্রেম, শান্তি ও মানব কল্যাণ। এক বর্বর হিংসাযুদ্ধের বিপরীতে সমাজে শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হওয়া আমাদের সবার কর্তব্য। দুর্গাপূজার অন্তর্নিহিত বাণীই হচ্ছে- হিংসা, লোভ ও ক্রোধরূপী অসুরকে বিনাশ করে সমাজে স্বর্গীয় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে মানবিক সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। উৎপীড়ন ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মধ্য দিয়ে যারা সমাজকে, মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করতে চায়, প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কুশাসন তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মানবকল্যাণ প্রতিষ্ঠাই এই উপাসনার অন্তর্নিহিত তাগিদ। সেই বাণীকে আত্মস্থ করেই দুর্গাপূজার উৎসব-আনন্দকে সবাই মিলে ভাগ করে নিতে হবে। উৎসবের পরিসর সংকীর্ণ নয়, বরং এটি উন্মুক্ত ও সর্বজনীন।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমঅধিকার ও সুরক্ষার সমান সুযোগের অলঙ্ঘনীয় বিধান থাকতে হবে। আমাদের দেশ একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে জনগোষ্ঠীর সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা সবাই মিলে এমন একটি যৌথ সম্প্রদায় গঠন করি, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। আনন্দময় দুর্গাপূজার উৎসবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই উৎসব প্রতিটি গৃহে সমৃদ্ধি, সম্প্রীতি ও শান্তিতে ভরে তুলে এবং সব সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক শুভেচ্ছা ও সংহতি প্রসারিত করুক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি- এটাই হোক আমাদের বড় পরিচয়। দুর্গোৎসবের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
এছাড়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্গাপূজা বাংলা ভাষাভাষীর হিন্দু জনগোষ্ঠীর সব মানুষের জীবনে একটা বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। সুদীর্ঘ কাল ধরেই এই উপমহাদেশে এই ধর্মীয় উৎসবটি এক সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। যে কোনো ধর্মীয় উৎসবই সাম্প্রদায়িক বিভেদ-বিভাজনকে অতিক্রম করে উৎসবের পরিসরে সবাইকে নিয়ে আমাদের যে সমাবেশ তা আবহমান সৌহার্দের শ্বাশ্বত চিত্র। দুর্গাপূজার উৎসব সবার মধ্যে নিয়ে আসে স্বর্গীয় আনন্দ ও শুভেচ্ছার বার্তা। উৎসব সব মানুষের মিলনই শুধু সম্পন্ন করে না, পরোক্ষে নানা সম্প্রদায়কে সংযুক্ত করে নানাভাবে। যে কোনো ধর্মীয় উৎসব জাতি-রাষ্ট্রে সর্বমানুষের মিলন ক্ষেত্র। বিএনপি আবহমানকালের দৈশিক চেতনা ও ঐতিহ্যের ধারায় ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী পতিত সরকারের আমলে সাম্প্রদায়িক উসকানি, বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবালয়ে আক্রমণ ও ভাঙচুর হয়েছে বারবার। বর্তমানে অশুভ চক্রের আক্রমণ ঠেকাতে হিন্দু সম্প্রদায় ও মন্দিরকে ঘিরে অশুভ চক্রের চক্রান্ত ঠেকাতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাহারা দিচ্ছে। যাতে শান্তি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা দেশ ও মানবতার শত্রু। তাদের প্রতিহত করতে বিএনপি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
মির্জা ফখরুল বলেন, যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে একত্রে বসবাস করছে। ধর্মীয় উৎসব সাম্প্রদায়িক সীমানা অতিক্রম করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে এক বৃহত্তর শুভেচ্ছাবোধে মিলিত করে। মানুষের আত্মাকে মিলনের বোধে উদ্দীপ্ত করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের জাতীয় ঐত্যিহের অংশ। আমরা সবাই বাংলাদেশি এটিই আমাদের গর্ব, এটিই আমাদের একমাত্র পরিচয়।