বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক মূল্যবোধকে পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী এবারও দেশব্যাপী তাদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করেছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে দুর্গাপূজা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের গত ১২ অক্টোবর দেওয়া একটি বিবৃতিতে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটিকে বাংলাদেশ সরকার ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক বলে মনে করে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া পোস্টে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ বলা হয়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে ৩২ হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়, যেখানে হিন্দু নারী-পুরুষ এবং শিশুরা দেবীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। রোববার সন্ধ্যায় সারা দেশে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে ১০ দিনব্যাপী এ উৎসব। কোনো ধরনের উসকানি ও অপপ্রচারকে উপেক্ষা করে সরকারের গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য সরকার সব হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে অভিনন্দন জানায়।
গত সপ্তাহে সারা দেশে যে কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অনতিবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসন এ পর্যন্ত ১১টি মামলা দায়ের করেছে এবং এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ জনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি চিরন্তন পরিচয় যা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে। বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার ধর্ম বা বিশ্বাস নির্বিশেষে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করার অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশে সব নাগরিকের বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকার একান্ত কর্তব্যরূপে গণ্য করে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করছে যে বাংলাদেশের জনগণের ধর্মনিরপেক্ষ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিচিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সরকার সদা সচেষ্ট।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া এক পোস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের গত ১২ অক্টোবর দেওয়া একটি বিবৃতির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। সেখানে ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘হিন্দু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় বিশেষ করে তাদের ধর্মীয় উৎসবের সময়ে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের।’ একই বিবৃতিতে আরেকটি অভিযোগ করা হয়, ‘…অপবিত্রকরণ এবং মন্দির ও দেবতাদের ক্ষতির একটি পদ্ধতিগত প্যাটার্ন।’ বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক বলে মনে করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই পোস্টে আরও জানায়, উৎসবের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটি ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছিল এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল।
ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরা জেলার জেশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে ১০ অক্টোবরে একটি সোনার মুকুট চুরির ঘটনায়, এটি নিশ্চিত করা হয়েছিল যে প্রধান পুরোহিত দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত তার নিয়মিত পূজা অনুষ্ঠান করেছিলেন। পুরোহিত এবং মন্দিরের কর্মচারীরা কেন এই ধরনের মূল্যবান সম্পত্তি অরক্ষিত এবং অনিরাপদ রেখে গিয়েছিলেন তা নির্ধারণের জন্য তদন্ত চলছে। চুরির ঘটনায় ইতোমধ্যেই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।