26 C
Dhaka
Saturday, October 19, 2024

পশ্চিম এশিয়া নিয়ে বিশ্বের ৪৯টি কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ বিবৃতি

গাজা এবং লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার, বন্দিদের মুক্তিসহ ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানিয়েছে বিশ্বের ৪৯টি বামপন্থি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানায় তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা পশ্চিম এশিয়াতে শান্তি এবং উন্নতির জন্য প্রচার করে চলেছি। এখন লেবাননের ওপর ইসরায়েলের বহুমুখী ক্রমবর্ধমান আক্রমণ এবং পূর্ণমাত্রায় অনুপ্রবেশের ফলে এই অঞ্চলে যে নজিরবিহীন অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে- সেই সম্পর্কে আমরা আমাদের গভীর আশঙ্কা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং লেবাননের ওপর যেসব উসকানিমূলক নিয়মবিরুদ্ধ, আইনবিরুদ্ধ ইসরায়েলি হামলা চলছে, তার ফলেই ইরান ইসরায়েলের ওপর পালটা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং তা অনুমেয়।

বিবৃতিদাতারা বলেন, আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান ট্রেন্ড (ধারা) যদি চলতেই থাকে, তবে আমাদের এই অঞ্চলগুলো দ্রুত পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এক সর্বগ্রাসী চক্রে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। তার ফলে তৈরি হবে এক বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবেই, তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে আমাদের দেশগুলোর এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বিধি-নিয়মের নিদারুণ খেলাপ করে, ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার গত ১২ মাস ধরে গাজায় লাগাতার গণহত্যা-যুদ্ধ চালাচ্ছে। তেহরান এবং বৈরুতে রাজনৈতিক নেতাদের নির্মমভাবে খুন করে চলেছে। এখন লেবাননে অনুপ্রবেশসহ সাংঘাতিক সব সন্ত্রাসমূলক যুদ্ধকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে যাতে, গোটা পশ্চিম এশিয়াজুড়ে তাদের শত্রুরা নির্মূল হয় এবং আরও ব্যাপক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বলাবাহুল্য, এ সবই হলো মার্কিন এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে তাদের অশুভ আঁতাতের ফল; যার উদ্দেশ্য হলো- পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন। তাই ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পরিকল্পনামাফিক আক্রমণাত্মক যোগসাজশ বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য এবং দমন প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন  শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলে আন্দোলন : রাশেদ প্রধান

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি তাদের দীর্ঘ দৃঢ় মুঠো পশ্চিম এশিয়ায় শক্ত করার জন্য ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে- কখনো লাগাতার আড়াল করে চলেছে, কখনো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ক্রমাগত সমর্থন করে চলেছে। আর ইজরায়েল পশিম এশিয়া দখল অভিযানে দাবানলে অগ্নিসংযোগকারীর ভূমিকা পালন করছে। রাষ্ট্রসংঘ, আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে আক্রমণাত্মক কৌশল বজায় রেখে চলেছে। আমরা মনে করি, পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হলো ফিলিস্তিনের সমস্যার সুনির্দিষ্ট শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান। তাই আমরা, অবিলম্বে গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে গণহত্যার শেষ চাইছি। এসব অঞ্চল থেকে সব ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

বামপন্থি সংগঠনগুলো জানায়, ইসরায়েলের জেলে বন্দি এবং ডিটেনশন সেন্টারে আটক সব ফিলিস্তিনিদের; গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদেরও মুক্তির দাবি করছি। তার সঙ্গে আমাদের দাবি, ৪ জুন, ১৯৬৭ সালে জাতিসংঘের নীতি অনুযায়ী যেমন সবাই নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনভাবেই তাকে পুনর্বহাল এবং বাস্তবায়িত করতে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট আইনি পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবিলম্বে ফিলিস্তিনে দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে। লেবানন এবং ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের সঙ্গে আমরা সংহতি জানাচ্ছি। বৈদেশিক অনুপ্রবেশ, আগ্রাসন, দখলদারিকে প্রতিহত করার জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের মৌলিক এবং সার্বিক অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করছি। লেবাননের সার্বভৌম ভূখণ্ড থেকে সত্ত্বর সমস্ত ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরানসহ ওই অঞ্চলগুলিতে লাগাতার বোমাবর্ষণ এবং সামরিক আক্রমণের ধ্বংসলীলা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।

আরো পড়ুন  অভিন্ন উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চাই, সব গোলাবারুদ-যুদ্ধাস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র রপ্তানি এবং ইসরায়েলকে প্রযুক্তিগত সাহায্য করা বন্ধ করতে হবে, যাতে তারা ফিলিস্তিন এবং লেবাননে তাদের ধ্বংসাত্মক নজিরবিহীন বিপজ্জনক সামরিক পরীক্ষা এবং অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হয়। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কাছে দাবি- গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা এবং যুদ্ধ বিষয়ক রায়গুলো বহাল রাখা হোক এবং অবিলম্বে সেগুলো বিনা বাধায় কার্যকর করা হোক। আমরা সব পক্ষের কাছে জাতিসংঘের আবেদনের প্রতি নজর দিতে আর্জি জানাচ্ছি, এই অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য বিপর্যয়কারী এক বৃহৎ ব্যাপক দুঃস্বপ্নের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা থেকে সরে এসে, আমরা যাতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সবাই আন্তরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।

আরো পড়ুন  ছাত্র সমাজের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ

স্বাক্ষরকারীদের তালিকা

আর্মেনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, অস্ট্রিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, অস্ট্রিয়ার লেবার পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ব্রাজিলের কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিডিওবি), ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি, কানাডার কমিউনিস্ট পার্টি, সাইপ্রাসের AKEL বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, ডেনমার্কের কমিউনিস্ট পার্টি, ফিনল্যান্ডের কমিউনিস্ট পার্টি, ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি, গ্রিসের কমিউনিস্ট পার্টি (কেকেই), হাঙ্গেরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), ইরানের তুদে পার্টি, ইরাকের কমিউনিস্ট পার্টি, কুর্দিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি- ইরাক, আয়ারল্যান্ডের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইজরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টি, ইতালির কমিউনিস্ট পার্টি, কাজাখস্তানের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, লুক্সেমবার্গের কমিউনিস্ট পার্টি, মাল্টার কমিউনিস্ট পার্টি, মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টি, নেদারল্যান্ডসের নতুন কমিউনিস্ট পার্টি, নরওয়ের কমিউনিস্ট পার্টি, প্যালেস্তাইন পিপলস পার্টি, পর্তুগিজ কমিউনিস্ট পার্টি, রাশিয়ার ফেডারেশনের কমিউনিস্ট পার্টি, রাশিয়ার কমিউনিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি, সার্বিয়ার কমিউনিস্ট, স্পেনের কমিউনিস্ট পার্টি, স্পেনের শ্রমিকদের কমিউনিস্ট পার্টি, কাতালোনিয়ার কমিউনিস্ট, শ্রীলঙ্কার কমিউনিস্ট পার্টি, সুদানের কমিউনিস্ট পার্টি, সুইডেনের কমিউনিস্ট পার্টি, সিরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, তুরস্কের কমিউনিস্ট পার্টি, ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টি, উরুগুয়ের কমিউনিস্ট পার্টি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টি, ভেনেজুয়েলার কমিউনিস্ট পার্টি, ইতালির কমিউনিস্ট ফ্রন্ট ও পার্টি অব কমিউনিস্টস ইউএসএ।

সর্বশেষ সংবাদ