অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ২৩ দফা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
শনিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে জোটের পক্ষ থেকে ২৩টি লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
এ সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ করে।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- সমমনা জোটভুক্ত জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান গোলাম মওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারি আবু তাহের, মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ব্যারিস্টার নাসিম খান, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এস এম শাহাদাত, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।
সমমনা জোটের ২৩ দফা হলো :
১. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক নিহত ও আহত ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে।
২. সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে এবং সংস্কার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।
৩. দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। সিক্রিকেট ভেঙে দিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৫. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৬. প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে।
৭. প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
৮. আওয়ামী সরকারের দুর্নীতিবাজ দোসররা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের দ্রুত অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৯. বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হবে। কোনো আনুপাতিক হার গ্রহণযোগ্য নয়।
১০. নির্বাচিত সংসদ দ্বারা সংবিধান সংস্কার করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের বড় কোনো সংস্কার করবে না।
১১. যে সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক নিয়মবহির্ভূতভাবে লোন প্রদান করেছে সেই সমস্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি, পরিচালক ও অসাধু কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে এবং ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শৃঙ্খলায় আনতে হবে।
১২. ২০০৯ সাল থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
১৩. বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
১৪. বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে সেসব টাকা ফেরত আনতে হবে এবং পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
১৫. পিলখানা হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার কার্য সম্পাদন করতে হবে এবং নির্দোষ তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজিবি এর নাম পরিবর্তন করে ‘বিডিআর’ করতে হবে।
১৬. নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আইন বাতিল করে আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দলকে সহজ শর্তে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য ২% ভোটের শর্ত বাতিল করতে হবে।
১৭. পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
১৮. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
১৯. স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করতে হবে।
২০. বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীন স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠন করতে হবে।
২১. ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
২২. অনতিবিলম্বে পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
২৩. কৃষকদের ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করতে হবে।