দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবই প্রথম স্বৈরতন্ত্রের জমিন তৈরি করে ফ্যাসিবাদের বীজ বুনেছিল। তিনি যদি ১৫ বছর দেশ শাসন করতেন তাহলে শেখ হাসিনাকেও ছাড়িয়ে যেতেন।
রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে মোজাফফর রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি কর্তৃক আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদী বয়ান নির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা : একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক শেখ মো. আরমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, শেখ মুজিব দেশের ফেরার পর প্রথম যে ব্যবস্থাগুলোকে ধ্বংস করেছেন তার মধ্যে অন্যতম গণতন্ত্র। বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন তিনি। শেখ মুজিব সাড়ে তিন বছরের শাসনে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে, দুর্ভিক্ষে মানুষ মেরেছে, রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। দেশের সব মিডিয়া, বিরোধী মতের কণ্ঠকে রোধ করেছে। আজ শেখ মুজিব বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের রাস্তা দেখিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা তার বাবার পথেই গত ১৫ বছর হেঁটেছে।
ফ্যাসিবাদ নির্মাণে বেশ কয়েকটি চলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কার্লট চরিত্র তৈরি, পাবলিক এনিমি তৈরি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদ বয়ান প্রচারে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ। এ বিষয়গুলোর মাধ্যমে সাবেক সরকার দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। উন্নয়নের নামে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে তাদের মাধ্যমে।
ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় মিডিয়ার মদদ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিডিয়া এই ফ্যাসিবাদ নির্মাণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। গত ১৫ বছরে মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। জঙ্গিকার্ড ব্যবহার করে ইসলামিফোবিয়াকে ছড়ানো হয়েছে। বেশকিছু পত্র-পত্রিকা সেখানে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। এখনো আমরা দেখছি, মিডিয়া ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে। তারা বলছে শেখ হাসিনা খারাপ, কিন্তু শেখ মুজিব ভালো। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামও দেখছি সে কথা লিখেছে। কিন্তু শেখ মুজিবের প্রত্যাবর্তনের পরের চিত্র শেখ হাসিনার থেকে ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্টের চিত্র। মিডিয়ার উচিত ১৫ বছরে যা হয়েছে সেটা নিয়ে রিভাইজ করা। সে সঙ্গে আর্থিক খাতগুলোতে কীভাবে আওয়ামী সরকার প্রকল্পের নামে দুর্নীতি করেছে তার পর্দা ফাঁস করা।
এ সময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং গণমাধ্যম কীভাবে তা বৈধতা দিয়েছে, তা ইতিহাসে খুব অদ্বিতীয় ঘটনা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ এবং বিশ্বের গবেষকরা একটি নির্মোহ গবেষণা করতে পারেন।
তিনি বলেন, (বর্তমান বাংলাদেশে) আমরা যেন কখনোই কোনো জনগোষ্ঠীকে বাদ না দেই। গত ১৫ বছরের প্রতি পরতে পরতে এটা ছিল। বিভিন্ন পত্রিকায় শিরোনামের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকে ন্যায্যতা দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকে ন্যায্যতা দিয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ মে হেফাজতের ওপর ক্র্যাকডাউনের পর একটি পত্রিকার লেখক প্রথম পাতায় হেফাজতকে ‘এনশিয়েন্ট এনিমেল’-এর সাথে তুলনা করেছে। কীভাবে গণতন্ত্র না থাকাই ভালো, তা দেখানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্টের আগেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে পাকিস্তান আমলের কায়দায় ছাত্রদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেকে গণমাধ্যমে গিয়ে অনবরত এমন মতামত দিয়েছেন। গণমাধ্যমকে সঠিক পথে আনতে সব মতের মানুষকে জায়গা দিতে হবে। গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমকে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে একটি নিজস্ব অনুসন্ধান করার আহ্বান জানান তিনি।