মাঝে কয়েক বছর শান্ত থাকলেও সম্প্রতি ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। গেল মার্চে জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাই ও বাংলাদেশি নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় আসে তারা। লোহিত সাগরে হুথিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলোর ব্যস্ততা ভারত মহাসাগরের গালফ অব এডেনে সোমালি জলদস্যুরা তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
মালবাহী জাহাজ আটকে পণ্য ছিনতাই ও নাবিকদের জিম্মির ঘটনা সোমালি জলদস্যুদের জন্য নতুন নয়। এমনই এক জাহাজ ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিল সোমালি জলদস্যুরা। কিন্তু সেই হামলায় তারা তো সফল হয়ইনি উল্টো দিতে হয়েছে খেসারত। কেননা, হামলার শিকার হওয়া জাহাজটি ছিল মার্কিন নৌবাহিনীর ফ্লেচার ক্লাস ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস নিকোলাস (FFG-47)।
সোমালি জলদস্যুরা বাণিজ্যিক জাহাজ ভেবে ইউএসএস নিকোলাসে হামলা চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কমপক্ষে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোমালি জলদস্যুদের ধরাশায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের চৌকস নৌসেনারা। জলদস্যুদের হামলার পর তাদের ছোট দ্রুতযান তাড়া করে ইউএসএস নিকোলাস। পরে ছোট ওই দ্রুতযানকে ডুবিয়ে দেয় নৌসেনারা।
২০১০ সালের এপ্রিলে ভারত মহাসাগরে ওই ঘটনা ঘটে। ইউএসএস নিকোলাসের ক্রুরা কিছু ছোট দ্রুতযান দেখতে পান। তখন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মার্কিন নৌসেনারা। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জলদস্যুদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। একই ধরনের ঘটনার সাক্ষী হয় মার্কিন নৌবাহিনীর আরেকটি যুদ্ধজাহাজ। ২০০৯ সালে জলদস্যুদের হামলার শিকার হয় ইউএসএস বেইনব্রিজ।
মার্কিন একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি মায়েরস্ক আলাবামাকে সোমালি জলদস্যুরা জিম্মি করে। তখন সেই জাহাজকে সাহায্যে এগিয়ে যায় আরলিগ বুর্কে-ক্লাস গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস বেইনব্রিজ। এমভি মায়েরস্ক আলাবামার ক্যাপ্টেন রিচার্ড ফিলিপস একটি লাইফবোটে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ছিলেন।
ক্যাপ্টেন ফিলিপসকে মুক্তির আলোচনা চলমান থাকলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায়। পরে মার্কিন নৌসেনারা অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। ইউএসএস বেইনব্রিজের কয়েকজন নেভি সিলের স্নাইপার রাতের গভীর দুর্ধর্ষ অভিযান চালান। তারা তিনজন জলদস্যুতে হত্যা করে ক্যাপ্টেন ফিলিপসকে নিরাপদে উদ্ধার করেন।
সামরিক সক্ষমতা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে অনেক দেশই জলদস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে পেরে ওঠে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই দিক থেকে ব্যতিক্রম। তাদের যেমন অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, তেমনি বিশ্বের প্রায় সব মহাসাগর এবং দেশে তাদের উপস্থিতি বা মিত্র রয়েছে। তাই জলদস্যুদের বাড়বাড়ন্তেও সাগরে বেশ নিরাপদেই থাকে মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজ।