27 C
Dhaka
Sunday, June 30, 2024

গাজা যুদ্ধের মধ্যে জঘন্যতম অপরাধ করছে মোদি সরকার, নথি প্রকাশ

অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৬৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গত বছর ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই যুদ্ধে প্রতিদিন ১০টি শিশুকে নিজেদের একটি কিংবা দুটি পা হারাতে হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিযুক্ত জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রমবিষয়ক সংস্থা এমন হৃদয়বিদারক তথ্য দিয়েছে।

ইসরায়েলের এমন একতরফা অভিযানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের নিজ দেশে চলছে বিক্ষোভ। হামলার শুরু থেকে নির্লজ্জভাবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে সবধরনের সহায়তা করে আসছে ঘনিষ্ঠ মিত্র ওয়াশিংটন।

তবে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক চাপে ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ সরকারের পক্ষ ছেড়েছে জো বাইডেনের সরকার। যদিও বরাবরের মতো তেলআবিবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। গাজায় বর্বরোচিত যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য রকেট, বিস্ফোরক রপ্তানি করছে ভারত। সম্প্রতি এমন নথি প্রকাশ হয়েছে। খবর আল-জাজিরার

গত ১৫ মে ভোরে কার্গো জাহাজ বোরকুম স্প্যানিশ উপকূলে নোঙর করে। কার্টেজেনা থেকে অল্প দূরে নোঙর করা ছিল কার্গোটি। সন্দেহজনক এই জাহাজটির গতিবিধির খবর পেয়ে বন্দরে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে জড়ো হয় কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী। তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জাহাজটি পরিদর্শন করার আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন  রাফা ছেড়ে পালালো সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি

আরও পড়ুন: আকাশ থেকে সৈকতে আচমকা ধাতব বস্তুর আঘাতে নিহত ৫, আহত শতাধিক

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার হাতে আসা গোপন নথির তথ্য অনুসারে, এই কার্গো জাহাজটিতে ভারতীয় বন্দর থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক বোঝাই করা হয়েছিল। এর গন্তব্য ছিল গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দর।

অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীরা বলছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পেরেছেন ভারতীয় এই কার্গোতে করে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র পরিবহন করা হচ্ছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বামপন্থী সদস্যরা স্প্যানিশ প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সানচেজকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জাহাজটিকে বন্দরে নোঙর না করতে দিতে অনুরোধ করেন। তাদের দাবি, ইসরায়েলের জন্য অস্ত্রবোঝাই জাহাজটিকে নোঙরের অনুমতি দেয়ায় অর্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যা চালানো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতে যাওয়া তেলআবিবের পক্ষে কাজ করার শামিল।

আরো পড়ুন  রাশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যে কারা?

সামুদ্রিক জাহাজ ট্র্যাকিং সাইটগুলো জানায়, এই কার্গোটি চলতি বছরের ২ এপ্রিল দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও হুতিদের সম্ভাব্য হামলা এড়াতে লোহিত সাগর বাদ দিয়ে আফ্রিকা ঘুরে স্পেন হয়ে ইসরায়েল যাচ্ছিল জাহাজটি। সম্প্রতি ইয়েমেনের হুতিরা গাজা যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল সম্পৃক্ত যেকোনো জাহাজে হামলা চালাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সলিডারিটি নেটওয়ার্কের প্রাপ্ত গোপন নথিতে দেখা গেছে, বোরকুম নামের কার্গোতে ২০ টন রকেট ইঞ্জিন, বিস্ফোরক চার্জসহ সাড়ে ১২ টন রকেট, এক হাজার ৫০০ কেজি বিস্ফোরক এবং ৩৩ হাজার কেজি রকেট রয়েছে। সেই সঙ্গে কামানের জন্য ৭৪০ কেজি চার্জ এবং প্রপেল্যান্ট রয়েছে জাহাজটিতে।

গোপন তথ্যে জানা গেছে, দ্বিতীয় আরেকটি কার্গো জাহাজ গত ২১ মে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র নিয়ে ভারতের একটি বন্দর ছেড়ে যায়। সেটিও স্পেনের কার্টেজেনা বন্দরে নোঙর করতে দেয়া হয়নি। স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইস জানিয়েছে, মারিয়েন ড্যানিকা নামের জাহাজটি ভারতের চেন্নাই বন্দর থেকে রওনা হয়েছিল এবং ২৭ টন বিস্ফোরক নিয়ে ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে যাচ্ছিল। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন, জাহাজটিকে ইসরায়েলের জন্য সামরিক পণ্য পরিবহন করার কারণে তাদের বন্দরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এই ঘটনাগুলো আরও প্রমাণ করে, কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সরকারের সময়কালীন অস্ত্রের এমন চালান গাজায় পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে তুলবে।

আরো পড়ুন  নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন, খেপলেন বাইডেন

এদিকে, গাজা যুদ্ধের মধ্যেও ইসরায়েলি অস্ত্রের শীর্ষ ক্রেতা হচ্ছে ভারত। গাজা যুদ্ধের পরও রপ্তানির পরিমাণ কমেনি। ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় শুরু করা যুদ্ধে বিপুল সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করছে ইসরায়েল। তবে এ যুদ্ধের কারণেও ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ভারতে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিতে প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন দেশ দুটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গত এক দশকে ইসরায়েল থেকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম (হার্ডওয়্যার) আমদানি করেছে দেশটি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে রাডার, নজরদারি যন্ত্র, যুদ্ধড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র।

সর্বশেষ সংবাদ