হাসপাতালের স্ট্রেচারে নারীর নিথর দেহ। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা। তার বুকের ওপর শুয়ে কাঁদছে এক বছরের শিশু। তার মাথায়ও ব্যান্ডেজ। আধো আধো বুলিতে মাকে ডাকছে তবে মায়ের কোনো সাড়া নেই। পাশে থাকা চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য রোগীর স্বজনরা শিশুটির কান্না থামাতে পারছেন না।
শুক্রবার (১০ মে) রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এ দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি কেউ।
শিশুটির কান্নার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে শনিবার (১১ মে) রাতে নিহত নারী ও চিকিৎসাধীন শিশুর পরিচয় পাওয়া যায়।
নিহত নারীর নাম জায়েদা আক্তার। তার শিশু সন্তানের নাম মেহেদি হাসান। তাদের গ্রামের বাড়ি সুমানগঞ্জ জেলার বাংলাবাজার কুসিউড়া এলাকায়। শিশুটিকে নিয়ে জায়েদা আক্তার ভালুকা আইডিয়াল মোড় মাস্টার বাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাত আনুমানিক ৩টার দিকে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই শিশু ও তার মা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।
ভালুকা ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই শিশু ও তার মা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তবে কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা জানা যায়নি। পরে ৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ ওই শিশু ও তার মাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তারিকুল ইসলাম তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। পুলিশ সদস্য তারিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দুর্ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে নিয়ে আসে তাদের। সঙ্গে কেউ না থাকায় আমি ওই শিশুটিকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ও শিশুর মাকে হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করি। পরে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই নারী মারা যান। শিশুটি এখনও হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফারজানা আক্তার বলেন, বাচ্চাটি মাথায় আঘাত পেয়েছে, তাকে সকল ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বাচ্চাটিকে ওয়ার্ডের অন্য রোগীর স্বজনরা দেখভাল করছেন।
ময়মনসিংহের ভালুকা মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ কালবেলাকে বলেন, নিহত জায়েদার ভাই রবিনকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি আসলে শিশুটিকে তার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মরদেহও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।