মোংলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও মায়ের মুখের পড়া মুখস্থ করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করেছে ঐতি রায় (১৫)। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ গ্রেড পেয়ে পাস করেছে।
মায়ের শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার বিজয়া হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দেয় ঐতি। ফলাফলে দেখা যায় সে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়েছে।
মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকার অনুপম রায় ও শংকরি রায় দম্পতির একমাত্রা মেয়ে ঐতি।
মেয়ের সফলতা নিয়ে অনুপম রায় বলেন, ঐতির মা শ্রুতি লেখনির মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখায়। এভাবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি মুখস্থ বলতো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা খাতায় লিখত। এভাবে সে সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেছে।
ঐতির মা বলেন, ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। আমরা খুব খুশি, স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তবে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ঐতি রায় বলে, জন্ম থেকে আমি দৃষ্টিহীন। কিন্ত পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। পড়াশোনার কাজে আমার মা আমাকে সহযোগিতা না করলে আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না।
পড়াশোনা শেষ করে সরকারি একটা চাকরি এবং আবৃত্তির শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের কথাও বলে ঐতি রায়।
ঐতি রায়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ঐতি ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাস করে স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার এই রেজাল্টে দারুন খুশি। দোয়া করি ঐতি তার মেধা বিকাশিত করে অনেক বড় হোক।