আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে ১ হাজার ২৫৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে বড় ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। আর সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি সভায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর আগে গত ৭ মে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বর্ধিত সভা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে এবার এডিপির আকার বাড়ছে ২ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে আকার কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। সেই হিসাবে নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এডিপিতে ১ হাজার ৩৩৭টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে ৭৯টি।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং পদ্মা রেল ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প।
এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিবি-৪) প্রকল্প। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো এ গুচ্ছ কর্মসূচিটি শুরু হয়। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে আগামী এডিপিতে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পের আওতায় খরচ হবে ৩৮ হাজার ২৯১ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭১ হাজার ৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৫ কোটি টাকা। এরপর ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট: মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি, হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের জন্য রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৫ কোটি, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনথেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৩৮৪ কোটি এবং ৫টি হাসপাতালে ৫০০ শয্যা উন্নতিকরণ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে প্রস্তাবিত এডিপি অনুযায়ী ৫৮টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি এবং পানি সম্পদ ,মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।