19 C
Dhaka
Thursday, December 5, 2024

এমপি আনার হত্যা আজই ঢাকায় আসছে কলকাতা পুলিশের টিম

ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশের একটি দল আজই ঢাকায় আসবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, বেলা ২টা নাগাদ ভারতীয় পুলিশের দুইজন সদস্য আজই ঢাকায় পৌঁছাবেন। তারা এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেফতার সন্দেহভাজন তিন আসামিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে জানান তিনি।

এমপি আনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউটাউনের সাঞ্জিভা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগে ভরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।

এ ঘটনায় গতকাল (২২ মে) এমপি আনারের মেয়ে ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেছেন। একইসঙ্গে কলকাতায়ও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন।

কলকাতার একটি সূত্র জানায়, যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে, ১৩ মে সেখানে দুজন পুরুষ ও একজন নারী প্রবেশ করেন। একদিন অবস্থানের পর ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই শিলাস্তি রহমান। ১৩ মে তিনি আমানুল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন।

আরো পড়ুন  দেশে প্রথমবারের মতো শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন

ঢাকার ডিবি সূত্রও বলছে, তাদের ধারণা ওই নারীই শিলাস্তি রহমান। আর শিলাস্তিকে হানি ট্র্যাপ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ তিনি ১৫ মে বিমানে দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন মূল কিলার আমানুল্লাহ। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এ তরুণীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কারণ, সব পরিকল্পনা করে শাহীন ১০ মে দেশে ফিরে এলেও শিলাস্তি থেকে যান কলকাতায়।

এদিকে গতকাল (২২ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় খুন হয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশিরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আমানুল্লাহ। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে। তিনি একসময় চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গণেশ নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে যশোরের অভয়নগর থানার এক মামলায় আমানুল্লাহ সাত বছর (১৯৯১-৯৭) জেল খাটেন। ইমান আলী নামের আরেক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন তিনি।

আরো পড়ুন  আ.লীগের ওপর আল্লাহর গজব পড়েছে : অ্যাড. শাহজাহান

তবে চরমপন্থীদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র বলছে, আমানুল্লাহ (আমান) নামে খুলনায় একজন সন্ত্রাসী আছেন, যিনি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান শিমুল ভূঁইয়ার অন্যতম সহযোগী ছিলেন। কিন্তু সাজা খাটার যে বর্ণনায় আছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে শিমুল ভূঁইয়াই নিজেকে আমানুল্লাহ বলে পরিচয় দেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে খুনের জন্য আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের সঙ্গে তার পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি হয়।

পুলিশ জানতে পারে, আক্তারুজ্জামান ও আনোয়ারুল আজিম পুরানো বন্ধু। আক্তারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। ঢাকার গুলশানে তার বাসা রয়েছে। তার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে তার বাসা। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কলকাতার ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়ার সময় আক্তারুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন; যা ভাড়ার চুক্তিপত্রেও উল্লেখ আছে। আক্তারুজ্জামানকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ খুঁজছে। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি গত সোমবার ঢাকা থেকে একটি ফ্লাইটে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু চলে গেছেন।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গত ৩০ এপ্রিল কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সাঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ওঠেন আক্তারুজ্জামান শাহীনসহ ৩জন। সেখানে বসে এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ১০ মে দেশে চলে আসেন শাহীন। পরিকল্পনামাফিক, বাংলাদেশ থেকে আরও দুই ভাড়াটে কিলারকে কলকাতায় নিয়ে যায় চরমপন্থী সেই আমান।

আরো পড়ুন  একাকিত্ব ঘোচাতে ৭৫ বছরে বিয়ের পিঁড়িতে আনু!

জানা গেছে, ১২ মে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান আনোয়ারুল আজিম। প্রথম দিন তিনি তার বন্ধু গোপালের বাসায় থাকেন। পরদিন ১৩ মে কৌশলে এমপি আনারকে নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীরা। আর সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, চাপাতির মুখে আনারকে জিম্মি করে আমান ও তার সহযোগী ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ। একপর্যায়ে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। এরপর শাহীনের পরামর্শ মতো লাশ গুম করতে এমপি আনারকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। দুটি ট্রলিব্যাগে ভরে তা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় হত্যাকাণ্ডের সহযোগীরা। এছাড়া, অবস্থান শনাক্তে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে আনারের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে, ভারতের বিভিন্ন স্থানে যায় আমানের দুই সহযোগী। হত্যাকাণ্ডে এক নারীও জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে আমান ও তার সহযোগিরা কত টাকার চুক্তিতে এমপি আনারকে কিলিংশ মিশনে অংশ নিয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে দুই দেশের তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থা।

সর্বশেষ সংবাদ