গাজায় সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যার জবাবে ইসরাইলে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এ হামলায় প্রথমবারের মতো নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে গোষ্ঠীটি। নতুন ওই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম ‘ফিলিস্তিন’। এ দিয়ে গত এক সপ্তাহে ইসরাইলে অন্তত দুবার হামলা চালানো হয়েছে, যা পুরো অঞ্চলে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, সবশেষ সোমবার (১০ জুন) দক্ষিণ ইসরাইলের বন্দর শহর এইলাতে ‘ফিলিস্তিন’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানায় হুতি বিদ্রোহীরা। তবে এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এর আগে, গত সপ্তাহে (৪ জুন) এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একই শহরে প্রথম হামলা চালানো হয়। ওইদিনের হামলায় কিছু ড্রোনও ব্যবহার করা হয় বলে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
ওইদিন হামলার পর টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুতি বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি বলেন, ‘ফিলিস্তিন’ নামে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইল অধিকৃত এইলাত বন্দরের একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। হামলার মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদন মতে, ওইদিন হুতির হামলা শুরুর পরপরই এইলাতে সাইরেন বাজিয়ে ইসরাইলিদের সতর্ক করা হয় এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠায় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
হামলার কথা স্বীকার করলেও তাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হয়েছে তা জানায়নি ইসরাইল। তবে হুতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বীকার না করলেও এসব হামলায় ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার অজুহাতে গাজায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। এরপর গত প্রায় ৮ মাস ধরে পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর রীতিমতো গণহত্যা চলছে।
এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি। নিখোঁজ রয়েছেন আরও প্রায় ১৫ হাজার।
ইসরাইলের এ বর্বর আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী ও সামরিক বাহিনী লোহিত সাগরে ইসরাইলি জাহাজে হামলা শুরু করে।
এক পর্যায়ে তারা ইসরাইল অভিমুখী যেকোনো দেশের জাহাজকে টার্গেট করার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর জাহাজ ও ড্রোন লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইয়েমেনের সশস্ত্র এ গোষ্ঠী।
ইসরাইলকে বাঁচাতে হুতিদের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে পাল্টা অভিযান চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সামরিক জোট। এতে এরই মধ্যে বহু হুতি যোদ্ধা হতাহত হয়েছে।
কিন্তু তাদের কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না। এডেন সাগর থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত ইসরাইলি ও পশ্চিমা জাহাজ ও স্বার্থ টার্গেট করে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে হুতিরা।
ইসরাইলি হামলায় নিষ্পেষিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জনাতেই নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের নাম দেয়া হয়েছে ‘ফিলিস্তিন’। বলা হচ্ছে, ইরানের ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে এর মিল রয়েছে, যা হাইপারসনিক গতিতে আঘাত হানতে পারে।
গত বুধবার (৬ জুন) আনসারুল্লাহ মিলিটারি মিডিয়া নামে এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়। তাতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র দেখানো হয়, যেটাকে হুতিরা ‘ফিলিস্তিন’ বলছে।
ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড বা মাথার দিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক কেফিয়াহ স্কার্ফের স্টাইলে আঁকা রয়েছে। ভিডিওতে ক্ষেপণাস্ত্রটি ধীরে ফায়ারিং তথা উৎক্ষেপণের জন্য উন্নীত করা ও এরপর উৎক্ষেপণ করতে দেখা যায়। এই ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি করেছে।
সারা বিশ্বে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে লাখো কোটি মানুষ গাজার গণহত্যার শিকার জনগণের সাথে একাত্মতা ও সংহতির চিহ্ন হিসেবে কেফিয়াহ পরিধান করছেন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।