ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ফোকলোর স্টাডিজের বিভাগে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকায় ৪৮ শিক্ষার্থীর জরিমানা ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশকে ১-৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে এভাবে জরিমানা করা শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষকরা।
জরিমানা মওকুফের কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে ইতোমধ্যে বিভাগে নোটিশ টাঙানো হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন বলছেন, বিভাগ চাইলে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে একাডেমিক কমিটিতে জরিমানা মওকুফ বা সংকোচন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অভিযোগ উঠেছে, বিভাগটিতে পাঁচটি কোর্সের মধ্যে অধিকাংশেরই ৮-৯টি করে ক্লাস নেয়া হয়েছে। একটি কোর্সে নেয়া হয়েছে চারটি ক্লাস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী ৭৫ শতাংশের বেশি ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে কোর্সপ্রতি এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ জরিমানা করেছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের সভাপতি। তবে এই অনুষদভূক্ত অন্য বিভাগগুলোতে জরিমানার হার কম। বিভাগগুলো একাডেমিক কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সব কোর্স মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেছে বলে জানা গেছে।
অ্যার্ডিন্যান্স অনুযায়ী জরিমানা করা হলেও সেই আলোকে শিক্ষকরা পর্যাপ্ত ক্লাস নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অনুষদীয় অ্যার্ডিন্যান্সে বলা হয়েছে, একটি কোর্স সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ৩৯ ঘণ্টা বা এর বেশি ক্লাস নিতে হবে শিক্ষকদের। বিভাগটির শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দু-একটি ক্লাসে উপস্থিতি না থাকায় জরিমানা গুনতে হয়েছে। এমন অনেকেই জরিমানার কবলে পড়েছেন যাদের পক্ষে জরিমানা পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে এর জন্য ঋণও করতে হয়েছে। বিভাগকে অনুরোধ করার পরও কোনোভাবে জরিমানা মওকুফ করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
এভাবে জরিমানা করে শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল মুঈদ। তিনি জানান, এটা শিক্ষার্থীদের প্রতি এক প্রকার অন্যায়। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী জরিমানা করার এখতিয়ার বিভাগের রয়েছে। তবে একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ঠিকমতো ক্লাস নেয়া। তবে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু শিবলী মো. ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে চায় না। সেই বিবেচনায় জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যার্ডিন্যান্সের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমার জানা মতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্যান্য বিভাগেও এভাবে জরিমানা নেয়া হয়।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত জরিমানা আদায় করা বৈধ নয়। তবে জরিমানা যা করা হয়েছে অর্ডিন্যান্সের আলোকে করা হয়েছে। শিক্ষকদের নৈতিক দিক থেকে ক্লাস নেয়া উচিত। কোনো শিক্ষক ক্লাস না নিলে সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এটা একান্তই সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিভাগ যেটা ইচ্ছা করতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে মাত্র চারটা ক্লাস নিয়ে জরিমানা করাটা একদমই অনুচিত। শিক্ষার্থীদের এসব ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন ভিসি।