ঈদুল আজহা উপলক্ষে জামালপুর থেকে ঢাকায় গরু বিক্রি করতে এসেছিলেন কয়েকজন ব্যাপারি। গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে ফেরার সময় ডাকাত দলের খপ্পরে পড়েন তারা। যে বাসে করে তারা ফিরছিলেন, সেই বাসেই হেলপার এবং যাত্রীবেশে ছিলেন ডাকাতরা। এরপর তাদের কিল ঘুষি দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে তাদের সঙ্গে থাকা গরু বিক্রির ৬ লাখের টাকা লুট করে নেয়। এরপর তাদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে ডাকাত দলের নেতারা এই লুটের টাকা দিয়ে ঈদে কোরবানি দেয়।
গত ১৬ জুনের এই ঘটনার পর ১৭ জুন বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। মামলার পর থেকে এই বিষয়ে কাজ শুরু করে ডিবির উত্তরা বিভাগ। তদন্তের একপর্যায়ে ডিবি এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে গত শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন নাবিস্কো এলাকায় ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানাধীন চরপাড়া মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ফয়সাল আহাম্মেদ রিগান (৩০), মো. তারেক মিয়া (৩৫), তানভীর আহম্মেদ অন্তর (২৬), মো. মিলন (২২), মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), মো. রতন মিয়া (৩৮), মো. সেলিম মিয়া (৩০), মো. রুবেল মিয়া (৩৪) ও মো. সুমন মিয়া (৩৫)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ডাকাতি করা ৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা, ১৩টি মোবাইল, ২টি চাকু ও প্লাস্টিকের রশি উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টোরোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে কনফারেন্স কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ১৬ জুন রাজধানীতে গরু বিক্রি করে ব্যাপারিদের একটি দল বিমানবন্দর এলাকা থেকে একটি বাসে উঠে জামালপুর যাওয়ার জন্য। বাসে উঠার পর বাসের দরজা লক করে দেয় হেলপার। এরপর ব্যাপারিদের শার্টের কলার ধরে ফেলে বাসের হেলপারসহ বাসে আগে থেকে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা। এ সময় ব্যাপারিদের কাছে গরু বিক্রি করার যে টাকা ছিল তা পুরোটা নিয়ে তাদের রাস্তায় ফেলে দেয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার পরদিন বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। মামলার তদন্তের একপর্যায়ে ডিবি উত্তরা বিভাগ এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ১০ ডাকাতের বিরুদ্ধে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ডাকাত দলের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা মানুষজনের কাছ থেকে ডাকাতি করা। এ ছাড়া তারা বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান করে প্রবাসীরা আসলে তাদের গাড়ির গতিরোধ করে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতরা জানিয়েছে লুট করার টাকার মধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের অন্যতম নেতা মো. জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল এবার ঈদে গরু কোরবানি দিয়েছে। লুটের টাকার মধ্যে থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের আরেক নেতা মো. তারেক মিয়া একটি গরু কোরবানি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে এই চক্রটি এখন পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০টির মতো ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এবারের ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে তারা এখন পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ঈদের আগে খিলক্ষেত এলাকায় চারজনকে গাড়িতে তুলে চক্রটি পাঁচ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল লুট করে নিয়ে যায়। ঈদের ১০ দিন আগে বিমানবন্দর থেকে একজন প্রবাসীকে গাড়িতে তুলে তার রিয়াল ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
ডিবিপ্রধান বলেন, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ঢাকার আশপাশে অনেক মামলা রয়েছে। সেগুলো আমরা তদন্ত করব। এ ছাড়া তারা ডাকাতির টাকা কীভাবে ভাগবাটোয়ারা করত সেগুলো আমরা রিমান্ডে জানার চেষ্টা করব।