চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা।
শনিবার (৬ জুন) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লেখেন, আব্বু ফোন করে জিজ্ঞেস করল- ‘তোমার ইউনিভার্সিটির কী অবস্থা?’
আমি বললাম- ‘ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ। পোলাপান এখন শুধু রাতে ঘুমায় আর দিনে শাহবাগ অবরোধ করে।’
আন্দোলনের অনুভূতি বর্ণনায় উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এতটা জীবন্ত আমি বিগত ৬ বছরে দেখিনি। এতটা ঐক্য! এতটা ভ্রাতৃত্ব! আন্দোলন একটা উৎসব। মিছিল যেন আমাদের সবার মিলনমেলা। যখন ৪-৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে মিছিল করি তখন মনে হয় সবকিছুই সম্ভব! রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের অনেকের জ্বর চলে আসে। আমাদের সবার জয়েন্টে ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, কিন্তু মনটাকে মিছিলে যাওয়া থেকে আটকাতে পারি না। যখন হাজারও কণ্ঠে স্লোগান ধরি তখন সব ব্যথা দূর হয়ে যায়, মনে হয় এতটা জীবন্ত অনুভব করিনি আগে কখনো।’
তিনি আরও লিখেছেন, আমরা সবাই বুঝতে পারছি, সরকার কোটা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে আমাদের আন্দোলনকে ঝুলিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা যে কতটা ঐক্যবদ্ধ, কতটা উৎসবমুখর আর কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তা সরকার জানে না। এ আন্দোলনের স্পিরিট দেখলেই বোঝা যায়, কোটাব্যবস্থা বহাল রাখা সম্ভব না। সফলতা শুধুই আজকের আর কালকের ব্যাপার।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে রোববার (৭ জুলাই) ঢাকার বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সাইন্সল্যাব এলাকা অবরোধ করে রেখেছিল। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় অবরুদ্ধ করে রাখেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করে রাখেন।
রোববার (৭ জুলাই) রাত ৮টায় শাহবাগ মোড় থেকে নতুন করে ‘এক দফা’ ঘোষণা করে সেদিনের মতো অবরোধ কর্মসূচির শেষ করেন আন্দোলনকারীরা। আজ আবারও ‘ব্লকেড’ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট চলবে। একই সঙ্গে, সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চলবে। আজকে (৭ জুলাই) শাহবাগ থেকে বাংলামটর পর্যন্ত অবরোধ গিয়েছে কালকে (৮ জুলাই) ফার্মগেট পর্যন্ত যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে শহরে। আগামী দিনে এটা আরও ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সংবিধানের সকল নাগরিকের সমান অধিকার আদায়ে লড়াই করছি। আমাদের আদালত দেখালে আমরা সংবিধান দেখাব। আমাদের আদালতের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। আমরা ৫০ বছর অপেক্ষা করেছি। আর কত? শিক্ষার্থীদের পিঠ দেয়ালে লেগে গেছে। হয় কোটা দূর করতে হবে, নয়তোবা পুরো বাংলাদেশকে শতভাগ কোটার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।