বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনকে ঘিরে এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, যেকোনো দেশ তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করলে সবচেয়ে নিরপেক্ষভাবে তা করার চেষ্টা করবে জাতিসংঘ।
যদি বিশ্বসংস্থাটি নিজস্বভাবে তদন্ত করতে চায় তাহলে সংস্থাটির আইনবিষয়ক বিভাগের (লেজিসলেটিভ বোর্ড) অনুমোদন প্রয়োজন হবে। সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারির এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সময় বুধবার (৩১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
এদিন ব্রিফিংয়ে তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সহিংসতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মানবিক সঙ্কট চলমান। ডুজারিক বলেন, আমি আপনাদের বলতে পারি রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সহিংসতা সত্ত্বেও আমরা দেখতে পেয়েছি এবং এটা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, বাংলাদেশে মানবিক সংকট চলমান। ঘূর্ণিঝড় রেমালসহ বেশ কিছু জরুরি অবস্থার শিকার মানুষদের অব্যাহতভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি আমরা এবং আমাদের অংশীদাররা। এ বছর ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ। ইন্টারনেট বন্ধ, ব্যাংক বন্ধ এবং কারফিউয়ের মতো অপারেশন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমাদের অংশীদাররা তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। গত মাসে ১২ লাখ মানুষকে হিউম্যানিটারিয়ান রেসপন্স প্লানের অধীনে ৮ কোটি ডলারের তহবিল চালু করেছি আমরা এবং আমাদের অংশীদাররা।’
এর আগে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। সাথে আছে গভীর উদ্বেগও। এ নিয়ে গেল ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশন ফলকার টুর্ক।
দুই পাতার চিঠিতে তিনি বলেন, আন্দোলন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শিক্ষার্থীসহ একাধিক মানুষের আহত ও নিহতের খবর পেয়েছেন তারা। একই সাথে সরকারের সমর্থক গোষ্ঠি দ্বারা আন্দোলনকারীরা সহিংস আক্রমণের শিকার হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের নিরাপত্তাখাতের জরুরি সংস্কারের পরামর্শও দেন টুর্ক।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘ। সার্বিক ঘটনা অনুসন্ধানে, স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান টিম পাঠাতে চান তারা।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত সোমবার (২৯ জুলাই) ফলকার টুর্ককে উত্তর পাঠান। এতে সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা তুলে ধরেন তিনি।
চিঠিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, টানা তিন সপ্তাহ কোটা সংস্কার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। সরকারও তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। তবে কিছু রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় চরমপন্থি ও জঙ্গি গোষ্ঠি তৃতীয় পক্ষ ভুল তথ্য ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল পথে পরিচালিত করে। পরিস্থিতি খারাপ হলে দুঃখজনকভাবে কিছু মানুষ নিহত হন এবং কিছু নির্মম ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন, মাসুদ বিন মোমেন। চিঠিতে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ফলকার টুর্কের মতো বাংলাদেশও তার নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় বদ্ধ পরিকর।