জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে গত ১২ বছর যাবত সরকারের ভেতরে মূলত দুটি উপায় নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও এই ধারণা দেন। যার একটি হচ্ছে আদালতে আবেদনের মাধ্যমে, অপরটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। এছাড়া সংসদেও সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হলো।
এই প্রজ্ঞাপন জারির পর ‘জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার’ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ দাবি করে এর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
প্রায় এক দশকের বেশি সময় জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা সীমিত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বছরের পর বছর বন্ধ রয়েছে জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়গুলোও। দলটির নেতা-কর্মীরা কোনো বাসায় বসলেও সেখানে পুলিশর হানা দেয়া ও গ্রেপ্তারের খবর প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।
এক দশক পর ২০২৩ সালের ১০ জুন পুলিশের অনুমতি নিয়ে ঢাকায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াত। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবারই তা খারিজ করে দেয়া হয়। গত বছরের ২৮ অক্টোবর এক প্রকার ‘চ্যালেঞ্জ’ দিয়েই ঢাকার আরামবাগে জনসমাবেশ করে দলটি। ওই সমাবেশের কিছুদূরে থাকা বিএনপির মহাসমাবেশ সেদিন ভণ্ডুল হলেও সেদিন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে ফিরে যায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে একই কর্মসূচি পালন করে দলটি। তারপর থেকে আর প্রকাশ্য কর্মসূচিতে তেমন দেখা মেলেনি জমায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের।
এমন অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে ‘হাস্যকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর। তিনি মনে করেন, গত ১৫ বছর যাবত জামায়াতের ইসলামী যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, তাতে দলটিকে নিষিদ্ধ করা কিংবা না করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তাদেরকে (জামায়াত-শিবির) নিষিদ্ধ করা হলো কি হলো না, দ্যাট ডাজ নট ম্যাটার (এটা কোন ব্যাপার না)।” তিনি মনে করেন, ছাত্র বিক্ষোভ দমাতে গিয়ে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে সেখান থেকে ‘দৃষ্টি ভিন্ন দিকে’ নেয়ার জন্যই জামায়াতে ইসলামীর ইস্যুটিকে ক্ষমতাসীনরা সামনে এনেছে। একই দাবি করেছে জামায়াতও।
তবে নিষিদ্ধ করার পর একটি আইনগত ভিত্তি হয় বলে উল্লেখ করছেন পর্যবেক্ষকরা। এখন কোনো ব্যক্তি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ফেসবুক কিংবা অন্য কোনোভাবে প্রচারণা চালালে, তাকে আইনের আওতায় আনতে পারবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি জামায়াতে ইসলামীকে আর্থিক সাহায্য দেয়, তাহলে তাকেও আইনের আওতায় আনা যাবে। কারণ, নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে প্রচারণা চালানো এবং তাদের আর্থিক সহায়তা করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ার পর সেই সংগঠনের ব্যানারে কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা অন্য কোন ধরনের তৎপরতা চালানো যায় না। এ ধরনের কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গেলে সরকার তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।