30 C
Dhaka
Friday, October 18, 2024

২০০০ টাকা বিলের জন্য হাসপাতালেই প্রাণ গেল শিশুটির

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে শিশু রেজোয়ানকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শনিবার (১ জুন) রাত ২টার দিকে। তবে তাতে শারীরিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। রোববার (২ জুন) সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। তবে ওই কয়েক ঘণ্টার চিকিৎসা বাবদ ২ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে বলা হয় শিশুটির স্বজনদের।

মানিকগঞ্জের ঘিওরে অবস্থিত মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির সঙ্গে তখন শুধু নারী স্বজনরাই ছিলেন। তাদের হাতে কোনো টাকা ছিল না। বিলের ২ হাজার টাকা পরে পরিশোধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা শিশুটিকে ছেড়ে দিতে আকুতি জানায়। এমনকি স্বজনদের একজনকে আটকে রাখার বিনিময়ে হলেও অসুস্থ শিশুটিকে ছেড়ে দিতে অনুনয় বিনয় করে। কিন্তু তাতেও মনে গলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

আরো পড়ুন  জামিনে কারামুক্ত হলেন সেই পাপিয়া

এ অবস্থায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে অসুস্থ শিশুটির বাবা সোহেল গাজী মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান বেলা ১১টায়। কিন্তু তার কয়েক মিনিট আগেই মারা যায় শিশু রেজোয়ান। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাকরুদ্ধ শিশুটির স্বজনরা। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয়রাও।

মৃত ওই শিশু পার্শ্ববর্তী শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের ফলসাটিয়া গ্রামের সোহেল গাজীর ছেলে।

কোনো চিকিৎসক নন, ২ হাজার টাকার জন্য এভাবে রোগী আটকে রেখে মেরে ফেলার ঘটনাটি ঘটিয়েছেন হাসপাতালের প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ঘটনার পরপরই একজন জুনিয়র এডমিন অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে, শিশু রেজোয়ানের স্বজন এবং বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হাসপাতালে অবস্থান নিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

আরো পড়ুন  ধেয়ে আসছে ঝড়: নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত

মৃত শিশুটির বাবা সোহেল গাজী অভিযোগ করে বলেন, রেজোয়ানকে ভর্তির পর ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি । অবস্থা খারাপ দেখে ৮টার দিকে ঢাকা রেফার্ড করে দেয়। ওই মুহূর্তে রেজোয়ানের মা এবং দাদি হাসপাতালে ছিল। তাদের কাছে কোনো টাকা ছিল না । ৩ হাজার টাকা বিলের জন্য দুই ঘণ্টার বেশি আটকে রাখার কারণে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি ।

এদিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যুর খবরে মৃত শিশুটির স্বজনরা হাসপাতাল ঘেরাও করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডাইরেক্টর ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শনিবার রাত ২টার দিকে রেজোয়ান নামের শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির তীব্র মাত্রায় নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এ অবস্থায় শিশুটির স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছিল। তার স্বজনরা তাকে নিতে দেরি করায় শিশুটি মারা যায়। তবে স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের এক স্টাফকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

আরো পড়ুন  ফরিদপুরে পিটিয়ে হত্যা: মন্দিরে আগুন দেয়ার সাথে ২ ভাইয়ের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি

ঘিওর থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস বলেন, মৃত শিশুটির স্বজনদের কাছ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমন ঘটনায় তার স্বজনরা যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

সর্বশেষ সংবাদ