ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) পদত্যাগ করে একটি সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়ে পলায়ন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। তবে তার চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় হবে সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করেছে। যদিও তার ছেলে জয় জানিয়েছে শেখ হাসিনা কোনো দেশে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করেননি। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন যে শেখ হাসিনার জন্য ভারত শেষ গন্তব্য নয়।
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, খুব কম সময়ের নোটিশে শেখ হাসিনা ‘সাময়িকভাবে’ ভারতে আসার অনুমতি চান। এতে বুঝা যায় এখানেই শেষ নয় তার গন্তব্য। এখন সবার প্রশ্ন তাহলে শেখ হাসিনার গন্তব্য কোথায়?
ব্রিটেন, আমেরিকা কিংবা অন্য কোন পশ্চিমা দেশ কি তাকে রাজনৈতিক দেবে? এমন প্রশ্নে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব কিছুই নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে তার ওপর।
পশ্চিমে আশ্রয় পাওয়া কঠিন হবে
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক টম কিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া শেখ হাসিনার জন্য খুব ‘কঠিন’ হবে। এমনকি সম্ভব নাও হতে পারে।
গত কয়েকদিনে যে খবর বের হয়েছে তাতে জানা যায়, শেখ হাসিনা শেষ মুহূর্তে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে আরো বেশি বল প্রয়োগ করতে বললেও সেটি আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনিস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, পশ্চিমা কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া শেখ হাসিনার জন্য খুব কঠিন হবে। কেননা শেখ হাসিনার শাসনামলে, বিশেষ করে গত কয়েকদিনে যা ঘটেছে, তা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো খুবই মর্মাহত হয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যে প্রবল শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং শেখ হাসিনা সরকারের যে দমন-পীড়ন ছিল সেটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর খুবই আপত্তি ছিল। যা শেখ হাসিনার জন্য খুবই চিন্তার বিষয় হবে, কারণ তার পরিবারের অনেক সদস্য পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাস করে। শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘণ নিয়ে যেসব দেশ মাথা ঘামায় না, তারা হয়তো তাকে আশ্রয় দিতে পারে।
এটা পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে কোন দেশ হতে পারে, কিংবা গাল্ফ দেশগুলোতে হতে পারে বলেন জানান কুগেলম্যান।
ছাত্র বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী যে শক্তি প্রয়োগ করেছে সেটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল সোচ্চার ছিল। তারপরও শক্তি প্রয়োগ করা থেকে শেখ হাসিনাকে নিবৃত্ত করা যায়নি।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক টম কিন বলেন, সে চেয়েছিল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আরো বেশি মানুষ হত্যা করতে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যদি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো তদন্ত করে এবং কোন বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় সেটি ভিন্ন পরিস্থিতির তৈরি করবে। সেক্ষেত্রে তিনি ব্রিটেনে থাকলেও নিরাপদে থাকতে পারবেন না।
অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে স্বৈরাচারদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার নজির রয়েছে ইউরোপ কিংবা আমেরিকায়। কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কদের আশ্রয় দেয়ার মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব।