35.3 C
Dhaka
Wednesday, September 11, 2024

আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ মুগ্ধর করুণ মৃত্যু নিয়ে যা লিখল মার্কিন সংবাদমাধ্যম

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের হাতে সেদিন পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)। টি-শার্টের হাতা দিয়ে কাঁদানে গ্যাসে জ্বলতে থাকা চোখ মুছতে মুছতেই পানি বোতল বিলিয়ে দিচ্ছিলেন সবার মাঝে। কিন্তু এর মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায়, রাজধানী ঢাকায় দুপুরের উত্তাপে বিশ্রাম নেয়ার সময় কপালে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এভাবেই শহিদ হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং ফ্রিল্যান্সার মুগ্ধ।

মুগ্ধর মৃত্যুর এমন বর্ণনা দিয়ে তাকে নিয়ে সোমবার (১২ আগস্ট) বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ঘটনার পরপরই মুগ্ধকে তার বন্ধু এবং অন্য বিক্ষোভকারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) সিএনএনকে বলেন, ‘আমি শুধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম এবং কান্নায় ভেঙে পড়ি।’

আরো পড়ুন  প্রেসিডেন্টকে ‘কালো জাদু’র অভিযোগে নারী প্রতিমন্ত্রী গ্রেপ্তার

আন্দোলনের শুরুর দিকে ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের আগে মুগ্ধর পানি বিতরণের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা শেয়ার করেন লাখ লাখ মানুষ। এই ভিডিও আন্দোলনে চরম উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়। পুলিশি হত্যাকাণ্ড এবং ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং বিভিন্ন সংস্থার সংবাদের বিশ্লেষণের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ একপর্যায়ে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। যার ফলে সৃষ্ট সহিংসতা এবং সংঘর্ষে অন্তত ৩০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।

ফারাহ পরশিয়া নামে ঢাকার একটি প্রযুক্তি কোম্পানিতে কর্মরত ২৩ বছর বয়সি এক বিক্ষোভকারী সিএনএনকে বলেন, হত্যাকাণ্ড চলছিল এবং সবাই নীরব ছিল। ফলে আমাদের নিজেদের জন্য এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য দাঁড়াতেই হতো।

আরো পড়ুন  পাঠ্যবই থেকে ফিলিস্তিনের মানচিত্র মুছে ফেলল যে দেশ

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা (সাধারণ মানুষ) যে কতটা ক্ষমতা ধারণ করি, তা দেখে আমি বিস্মিত। কারণ, বহু বছর ধরে আমরা সবাই ক্ষমতাহীন বোধ করে এসেছি।’ শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্যদিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসার পর, আন্দোলনে নিহত অনেকের পরিবার এখন তাদের প্রিয়জন নিহতের ঘটনায় জবাবদিহিতা চাইছেন।

খাওয়া, ঘুম, এক সঙ্গে পড়াশুনা থেকে শুরু করে পোশাক ভাগাভাগি; যমজ দুই ভাই মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ যেন জন্ম থেকেই ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। স্নিগ্ধ বলেন, সে (মুগ্ধ) শুধু আমার ভাই ছিল না, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। সে আমার শরীরেরই একটি অংশ, আমরা এক সঙ্গে সবকিছু করতাম।

আরো পড়ুন  কলকাতায় সিয়ামকে নিয়ে অভিযান, খালে পাওয়া গেল হাড়গোড়

সিএনএন বলছে, গণিতে স্নাতক মুগ্ধ এমবিএ পড়ছিলেন, আর স্নিগ্ধ আইনে স্নাতক। যমজ এই দুই ভাই তাদের পড়াশুনা আরও এগিয়ে নিতে এবং মোটরসাইকেলে করে ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। ভ্রমণের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে, তারা অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইভারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করছিলেন। কিন্তু মুগ্ধকে ছাড়াই এখন এক অস্থির সময়ের মুখোমুখি স্নিগ্ধ এবং তাদের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান (দীপ্ত)।

মুগ্ধর মৃত্যুর সময় তার গলায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড। সেই অন্ধকার দিনের প্রতীক হিসেবে শুকিয়ে যাওয়া রক্তমাখা আইডি কার্ডটি সযত্নে রেখে দিয়েছে তার পরিবার। প্রতিবাদ-আন্দোলনে মুগ্ধ যে প্রভাব ফেলেছে, তা থেকেই সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন তারা।

সর্বশেষ সংবাদ