27 C
Dhaka
Tuesday, September 17, 2024

নতুন সরকারে আস্থা বাড়ছে প্রবাসীদের

অন্যায্যভাবে ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের চেষ্টা করায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে রেমিট্যান্স না পাঠানোর ঘোষণা দেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর ফলে জুলাই মাসে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী রেমিট্যান্সে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আস্থা বাড়ছে প্রবাসীদের। নতুন সরকারকে শক্তিশালী করতে তারা আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে আগস্টের শুরু থেকেই বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ৩ দিন পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। আর ৪ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে প্রবাসীরা ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ এই সময়ে আগের ৩ দিনের চেয়ে ৪ গুণের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা। সবমিলিয়ে আগস্টের প্রথম ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটির (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ডলার এসেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪২ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।

আরো পড়ুন  বৈদ্যুতিক টাওয়ারে পাগল, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৩ উপজেলা

এর আগে প্রবাসীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরব হন। এর প্রভাব পড়ে রেমিট্যান্সে। টানা তিন মাস দুই বিলিয়নের বেশি আসা রেমিট্যান্স হঠাৎ জুলাই মাসে দুই বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা ১৯১ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হুহু করে বাড়ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত ৫ আগস্ট। ৬ আগস্ট কোনো সরকার ছাড়াই চলেছে দেশ। ৭ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর দিন ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকার নিয়ে দেশের ছাত্র-রিকশাচালক থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে যেমন এক ধরনের স্বস্তি দেখা গেছে, তেমনি প্রবাসীরাও এই সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন সরকারকে সহযোগিতা করতে তারা আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন।

আরো পড়ুন  প্রেমিক পাচ্ছেন না সাড়ে সাত ফুটের তরুণী!

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৌদি আরবে অবস্থানরত মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, পরিবার-পরিজন যেন স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারে, সেজন্যই সবাইকে ছেড়ে প্রবাসে অবস্থান করছি। কিন্তু গত জুলাই মাসে দেশে ইন্টারনেট বন্ধসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারিনি। কারণ, টাকা পাঠানোর সব মাধ্যমই বন্ধ ছিল। তখন অনেকেই বিকল্প উপায়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন। এখন নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় আমাদের প্রবাসীদের আস্থা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফলে আমরা চেষ্টা করব আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে।

প্রবাসীদের সবার মধ্যেই এমন মনোভাব তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে নতুন সরকারের কাছে আমাদের বড় প্রত্যাশা হচ্ছে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া যেন আরও সহজ করা হয়। যাতে আমরা যখন তখন চাইলেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারি।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্কের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান কালবেলাকে বলেন, এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এজন্য আরও কিছুটা সময় দেখতে হবে। কারণ প্রবাসীরা যদি বৈধ পথে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান, তাহলে আমাদের রিজার্ভ বাড়বে, সেইসঙ্গে আমাদের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।

আরো পড়ুন  দর নির্ধারণ করায় ডলার উধাও

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১০ আগস্ট পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ মাসে ২ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ১০ তারিখের তথ্য প্রকাশিত হলেও গতকাল ছিল আগস্টের ১৩ তারিখ। বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই তিন দিনে আরও অনেক বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। তবে ১৩ তারিখ পর্যন্ত কী পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও সেটা জানা যায়নি। তারা বলছেন, সদ্য পদত্যাগ করা ডেপুটি গভর্নরের নির্দেশ ছিল, তার অনুমতি ছাড়া রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এখন পর্যন্ত সেই নির্দেশনাই বহাল রয়েছে বলেও জানা গেছে। যদিও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে গত ৭ আগস্ট তিনি সাদা কাগজে লিখে পদত্যাগ করেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে গত রোববার পদত্যাগ করেন।

সর্বশেষ সংবাদ