ডলারের দাম ১১৯ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর রাজধানীর মানি চেঞ্জারগুলো প্রায় ডলার শূন্য হয়ে পড়েছে। গুলশান ও মতিঝিলের মানি চেঞ্জারে ১১৯ টাকা দামে কোনো ডলার বিক্রি হচ্ছে না। নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে না পারায় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা দামেই। গতকাল মতিঝিল, গুলশান ও ধানমন্ডির বেশকিছু মানি চেঞ্জার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বুধবার মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমসিএবি) পক্ষ থেকে সব মানি চেঞ্জারকে চিঠি দিয়ে ডলারের দাম ১১৯ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। গতকাল একাধিক মানি চেঞ্জারে গেলে বিক্রেতারা জানান, ১১৯ টাকায় কোনো ডলার নেই। অনেক মানি চেঞ্জার ডলার নেই বলে ফিরিয়ে দিলেও পরবর্তী সময়ে অন্য জায়গা থেকে ১২৫ টাকায় এনে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ক্রেতা। বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বেশি দামেই ডলার কিনেছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন অধিকাংশ ক্রেতা।
ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার জন্য ডলার কিনতে এসে এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান মো. সোহেল মিয়া। তিনি বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য জরুরিভিত্তিতে চেন্নাই যেতে হবে। তাই বাড়তি টাকা দিয়েই বেশি দরে ডলার কিনেছি।
নির্দেশনার পরও কেন ১১৯ টাকায় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন মানি চেঞ্জারের বিক্রেতা কালবেলাকে বলেন, আমরা মূলত বিদেশ থেকে প্রবাসীরা সঙ্গে করে যে ডলার নিয়ে আসেন, সেটাই আমরা কিনে বিক্রি করি। এ অবস্থায় বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে গত সপ্তাহে প্রবাসীরা কম এসেছেন। ফলে আমাদের বেশি দামেই ডলার কিনতে হয়েছে। এজন্য ১১৯ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে এরই মধ্যে ১২৫ টাকায় উঠে গেছে। এমন সময়ে মানি চেঞ্জারদের পক্ষ থেকে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১১৯ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যদিও এই দামে খুব বেশি ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি এম এস জামান কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে চিঠি দিয়েছি। এবং সরেজমিন দেখেছি যে, আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত সব মানি চেঞ্জার নির্ধারিত দরেই ডলার বিক্রি করছে। তবে ডলারের সংকটের কারণে হয়তো সবাইকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার দিতে পারেনি।’ তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের অস্থিতিশীলতায় প্রবাসীরা কম এসেছেন। এতে আমাদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ কিছুটা কমে গেছে। কারণ বিদেশ থেকে যারা আসেন, তারা আমাদের কাছে ডলার বিক্রি করে থাকেন। ফলে মানি চেঞ্জারে ডলার মিলছে না। ব্যাংক থেকেও আমরা কোনো ডলার পাচ্ছি না। ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার পাওয়া গেলে নির্ধারিত দরেই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার সরবরাহ করা যেত।
খোলাবাজারে ১২৫ টাকায় ডলার বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খোলাবাজারের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খোলাবাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার পাঁয়তারা করছে। এটা সব সেক্টরেই আছে। তবে আমরা এ বিষয়ে সোচ্চার আছি। আগামী সপ্তাহে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
জানা গেছে, খোলাবাজারে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি ডলার ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হতো। নগদ ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে এ রকমই ছিল। তবে ছাত্র আন্দোলনের পর গত সোমবার তা বেড়ে ১২২ টাকায় ওঠে, যা এখন ১২৫ টাকা হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত খোলাবাজারে প্রভাব পড়েছে।
খোলাবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ফেরার সময় প্রবাসীরা নিজেদের সঙ্গে করে যে ডলার নিয়ে আসেন, সেগুলো খোলাবাজারে বিক্রি হয়; কিন্তু এখন বিদেশ থেকে মানুষ আসা কমে যাওয়ায় ডলারের সরবরাহ কমেছে। এতে সংকট তৈরি হয়েছে। প্রবাসী আয় কমে হুন্ডি বাড়াতেও ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে।