ঠিক কয়েকদিন আগেও সড়কে যে পরিমাণে চাঁদাবাজি হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসায় এখন তা নেই বললেই চলে। সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি না থাকার প্রভাবে দেশের সবচেয়ে বড় নিত্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কমেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। এতে নেমে এসেছে কিছুটা স্বস্তি। যার প্রভাব পড়েছে খুরচা বাজারেও। ঝাঁজ কমেছে সব পণ্যের দামের।
গত কয়েকদিন ধরে স্থিতিশীল আছে সব নিত্যপণ্যের দাম। আগে যেখানে নানা অজুহাতে প্রতি ঘণ্টায় দাম ওঠানামা করত, সেখানে রোববার (১১ আগস্ট) থেকে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) পর্যন্ত বাজারে সব পণ্যের দাম রয়েছে স্থিতিশীল। নতুন করে দাম বাড়েনি কোনো পণ্যের। তবে বেচাকেনা কিছুটা কমেছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের মনিটরিং টিমের পাশাপাশি নিয়মিত বাজারের খোঁজখবর নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থান থেকে নিত্যপণ্য খাতুনগঞ্জের বাজারে আসতে বেশ কয়েকবার চাঁদা দিতে হতো। এসব চাঁদা নিতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এখন চাঁদা আদায়ে জড়িতরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত কয়েকদিন নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে দাম কমার প্রত্যাশা করছেন ক্রেতারা।
সরকারের পতনের পর থেকে সড়কে যানবাহনে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি বলেন, যারা চাঁদাবাজি করত তারা পালিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল আছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। উল্টো কমেছে বেশিরভাগ পণ্যের দাম। তবে ডিও বাণিজ্য বন্ধ হলে পণ্যের দাম আরও কমে আসবে।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৯৫-৯৭ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা, চায়না পেঁয়াজ ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। চায়না রসুন ১৭৫ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, আদা ২১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পণ্যের দাম আগের সপ্তাহে ১০ টাকা করে বেশি ছিল।’
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক বলেন, ‘গত সপ্তাহে পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। কমবেশি বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমেছে। তবে বাজারে ক্রেতা কম। সড়কে পণ্যবাহী পরিবহন থেকে আগে চাঁদাবাজি হতো। এখন বন্ধ আছে। এতে গাড়ি প্রতি কিছু টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। দাম কমার এটি প্রধান কারণ। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আছে স্কেল। এটা দেশের আর কোনো মহাসড়কে নেই। স্কেল বসানোর কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতি ট্রাকে ১৮-২০ টন পণ্য আনা-নেওয়া গেলেও ১৩ টনের বেশি নেওয়া যাচ্ছে না। এতে ভাড়া বেশি পড়ছে। দামেও প্রভাব পড়ছে। তাই ওজন স্কেল সরালে একই খরচে বেশি পণ্য আনা যাবে, দামও আরও কমবে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘বেনাপোল, যশোর কিংবা ঢাকা থেকে এক ট্রাক পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে এলে একাধিক স্থানে চাঁদা দিতে হতো। এর মধ্যে ছিল পৌরসভার নামে টোল, সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলের নামে চাঁদা এবং পুলিশের নামেও চাঁদা আদায় করা হতো। প্রতি গাড়ি থেকে অন্তত চার হাজার টাকা নিত তারা। সরকার পতনের পর থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ আছে। চাঁদা আদায়ে জড়িতরা পালিয়ে গেছে। এটা যেন আজীবন বন্ধ থাকে, সে উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। তাহলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না।’