29 C
Dhaka
Thursday, September 19, 2024

পশ্চিমবঙ্গে মমতার পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও, ব্যাপক সংঘর্ষ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহুল আলোচিত আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজ্য সচিবালয় ঘেরাও করছে হাজার হাজার মানুষ। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে ‘নবান্ন অভিযান’ শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের রাজধানী কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের ডাকে শত শত মানুষ সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার লক্ষ্যে দাঙ্গা পুলিশ টিয়ারগ্যাসের সেল ও জলকামান ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছেন।

আরজি কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ প্রতিবাদ এখন এক দফা দাবিতে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্যের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছেন। মমতা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এই এক দফা দাবির আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে রাজ্যের বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও বামেরা।

আরো পড়ুন  স্কুলে হামলা চালাতে গিয়ে ৪ ইসরাইলি সেনা নিহত

এনডিটিভি বলেছে, মঙ্গলবার রাজ্যে বিক্ষোভ-মিছিলের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। রাজ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছে বলে সোমবার অভিযোগ করে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিক্ষোভকারীদের পদযাত্রা ঠেকাতে রাজ্য পুলিশ সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা বসিয়েছে। এর মাঝেই সকাল ১১টার দিকে রাজ্য সচিবালয় নবান্নে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফলা সচিবালয় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ৬ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। তবে বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সচিবালয় অভিমুখে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। এ সময় কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। এতে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালের দিকে একদল বিক্ষোভকারী কলেজ চত্বরে জড়ো হয়ে নবান্নের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। এ সময় আরজি করে ভয়াবহ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন তারা। শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ডাক দেওয়া বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে রাজ্যের কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক ফোরাম। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন রাস্তায় বসানো ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।

আরো পড়ুন  কে এই ‘ভোলে বাবা’, যার ‘সৎসঙ্গে’ প্রাণ গেল শতাধিক মানুষের!

রাজ্য বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, বিক্ষোভের আগে মধ্যরাতে চার ছাত্র নেতাকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তারা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। বিধানসভার বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, বহু জায়গা থেকে অত্যাচারের খবর আসছে। তিনি রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমনপীড়ন না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায়, বুধবার রাজ্য স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের বসানো ব্যারিকেড ভেঙে নবান্ন অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যারিকেডের ওপরে উঠে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। বিক্ষোভকারীরা ‘‘দাবি এক, দফা এক, মমতার পদত্যাগ’’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে কালো পোস্টারেও লেখা রয়েছে স্লোগান। কারও কারও হাতে রয়েছে জাতীয় পতাকা। বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তারা নবান্নে যেতে চান। কিন্তু পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে।

আরো পড়ুন  সরকারি ঘরের টাকা পেয়েই প্রেমিকের সঙ্গে পালাল ১১ গৃহবধূ

• হাওড়া সেতুতে উত্তেজনা
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া সেতুতে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যারিকেডের একাংশ ভেঙে আন্দোলনকারীরা এগিয়ে আসার সময় পুলিশের জলকামান ছোড়া হয়। সেখানে কাঁদানে গ্যাসও ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জও করা হয়েছে। পুলিশের ত্রিমুখী আক্রমণে হাওড়া সেতুতে আসা বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।

• পিটিএস, সাঁতরাগাছিতে সংঘর্ষ
কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের (পিটিএস) কাছে কয়েকশ মানুষ মমতার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এসময় ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে আসার চেষ্টা করায় বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ছুড়েছে পুলিশ। এছাড়া সাঁতরাগাছিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সহিংসতার আশঙ্কায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে ট্রেন চলাচল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে সাঁতরাগাছিতে পৌঁছেছেন রাজ্য পুলিশের মহাপরিদর্শক রাজীব কুমার। তার সঙ্গে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। সাঁতরাগাছিতে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করছে পুলিশ। সরকারি গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ