27 C
Dhaka
Tuesday, September 17, 2024

কাস্টমসে আটকা সাবেক ৪৪ মন্ত্রী-এমপির গাড়ি সহজ শর্তে বিক্রি হবে

সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি কিনতে পারেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সেই সুবিধায় বিভিন্ন সংসদ সদস্যের নামে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে ৫১টি বিলাসবহুল গাড়ি। উত্তপ্ত পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ৭ জন সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ি ছাড়িয়ে নেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় বাকি গাড়িগুলো বিনা শুল্কে ছাড়িয়ে নেয়ার আর সুযোগ নেই। ফলে গাড়িগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর জন্য অবশ্য শর্ত সহজ করে দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত কোনো নির্দেশনা না আসলেও অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এই গাড়িগুলো বিক্রির ক্ষেত্রে শর্ত সহজ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত বুধবার (২৮ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সাবেক এমপিদের নামে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে আটকে থাকা শুল্কমুক্ত গাড়ি ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না। ফেরত পাঠালে দেশ রাজস্ব হারাবে। তাই এই গাড়িগুলো বিক্রি করার শর্ত সহজ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন  পরীমণির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে চাকরি হারাচ্ছেন সেই সাকলায়েন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু, নাটোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান মঞ্জু, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরি, সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস, হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এবং বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরসহ অন্তত ৫১ জন।

তাদের মধ্যে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান ও নায়ক ফেরদৌসসহ ৭ জন শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়েছেন। বাকিদের গাড়ি এখন আটকে গেছে। সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আর হেনরী এবং মুজিবুর রহমান মঞ্জু সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও গাড়ি খালাস নিতে পারেনি। এছাড়া অনুপম শাহজাহান জয় ও এবিএম আনিসুজ্জামান নামে আরও দুই সাবেক এমপি গাড়ি ছাড় করাতে নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন। এই চারটি গাড়িও এখন কাস্টমসের জিম্মায়।

আরো পড়ুন  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক সুবিধার আওতায় বেশিরভাগ গাড়ি জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগট মডেলের এসব গাড়ির ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি চার হাজার সিসি। সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে; তবে এমপিদের তা দিতে হয় না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়নি।

এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি দামের গাড়ি আমদানি করেছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তার ব্যাংক ঋণপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তিনি একটি গাড়ি আমদানির জন্য এক লাখ ১১ হাজার ডলারের এলসি খোলেন। শুল্ককরসহ এ গাড়ির দাম পড়বে প্রায় ১১ কোটি টাকা। তবে তিনি তার গাড়ি ছাড়াতে পারেননি।

আরো পড়ুন  আরও এক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন আসিফ মাহমুদ

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু সংসদটা ভেঙে গেছে। এখন শুল্কমুক্ত সুবিধা তারা পাবেন কি না, সে বিষয়ে সরকারের দিকনির্দেশনার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠির জবাবে যে নির্দেশনা দেয়া হবে, সে আলোকে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবো।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‌কাস্টমস কর্তৃক ডিউটি পেমেন্ট করার পরেই আমরা চার্জটা নিই এবং ডেলিভারি করি। কেউ যদি ডেলিভারি নিতে না আসে তাহলে ৩০ দিন পর নিলামের জন্য হস্তান্তর করে দিই।

প্রসঙ্গত, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ি যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় কেউ খালাস না করেন তবে সেগুলো বিক্রি করতে পারে সরকার।

সর্বশেষ সংবাদ