রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাজারে সকাল থেকেই ক্রেতাদের বেশ উপস্থিতি। সেখানকার মাছ বাজারে সব ধরনের মাছের দামই বেশ চড়া। এরইমধ্যে মাছ কেনার জন্য বাজারে ঘুরছিলেন মনোয়ার হোসেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইলিশ মাছের একটি দোকানের সামনে দাঁড়ান। জানতে চান, ইলিশ মাছের দাম। দোকানির উত্তর শুনে মনোয়ার হোসেনের চোখ কপালে উঠার দশা।
বেসরকারি চাকরিজীবী মনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলো ইলিশের কেমন দাম? উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতাদের ইলিশ কিনতে পারা তো দূরের কথা, দাম জানতে চাওয়াই অনেক সাহসের ব্যাপার।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অতিরিক্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। গেল কয়দিনের তুলনায় আরও বেড়েছে দাম।
বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬০০ টাকা করে। এর চেয়ে একটু বড় অর্থাৎ ১ কেজি ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়। আর দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০০ টাকায়। সেইসঙ্গে ৫০০ গ্রাম ওজনের কাছাকাছি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে।
এরমধ্যে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত গতকাল নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছেন সাধারণ মানুষরা। তাদের মতে, আমরা নিজেরাই এত দামের কারণে ইলিশ কিনে খেতে পারছি না, এরমধ্যে সরকার আবার রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলো।
রপ্তানির বিষয়ে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখা থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩০০০ টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রপ্তানিকারকদের আবেদনের বিপরীতে নির্ধারিত শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলো।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে স্বীকৃত ইলিশ। টানা পাঁচ বছর ধরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। যদিও ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ ছিল। প্রায় প্রতিবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানিয়ে থাকেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।
এমন সিদ্ধান্তের পরের দিন রোববার রাজধানীর খুচরা মাছের বাজারগুলো ঘুরে ইলিশ চড়া দাম দেখা গেছে। এছাড়া সচরাচর এই দাম আর কমারও কোনও সম্ভাবনা নেই।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের বাজার করতে আসা সাদেকুর রহমান একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বাজার করতে এসে শখ করে ইলিশের দাম জানতে চেয়ে অতিরিক্ত বেশি দামের কথা শুনে হতাশ হয়েছেন। পরে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ইলিশের দাম অতিরিক্ত বেশি। এত দামে ইলিশ খাওয়ার সক্ষমতা নেই সাধারণ মানুষের। এরমধ্যে গতকাল শুনলাম ইলিশ রপ্তানি হবে। যেখানে আমরাই স্বাভাবিক দামে ইলিশ কিনতে পারি না, সেখানে রপ্তানির কি দরকার? বড় ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করার সাহসই পাই না। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দামই ১৬০০ টাকা চাইলো।
ইলিশের দাম বিষয়ে রাজধানীর বাড্ডার একটি বাজারের ইলিশ বিক্রেতা লাল মিয়া বলেন, আসলে বর্তমানে ইলিশের সাপ্লাই অনেক কম। মাঝারি সাইজের ইলিশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে, কারণ এটাই সবাই কিনতে পারে। এখনও এই সাইজের ইলিশের দামও বেশি।
ইলিশ বিক্রেতা লাল মিয়া বলেন, আজকের বাজারে দেড় কেজির ওপরের ইলিশ ২০০০/২২০০ টাকা। ১ কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১৮০০, এক কেজি ওজনের ১৬০০ টাকা। আর এর চেয়ে একটু ছোট ৭০০/৮০০ গ্রাম ইলিশগুলো প্রতি কেজি ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ঢাকার অন্যান্য খুচরা বাজারে যে ইলিশ যে দামে বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে কারওয়ান বাজারে ২০০/৩০০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়। কারণ এখানে পাইকারির পাশাপাশি খুচরাও বিক্রি হয় তুলনামূলক বেশি পরিমাণে।