দেশে বর্তমানে যেকয়টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। এসব ব্যাংকে জমা আমানতের বিপরীতে বেশি ঋণ বিতরণ বা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা এসব ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি আরও বড় আকার ধারণ করেছে।
শরিয়াহভিত্তিক ১০ ব্যাংকের মধ্যে সমস্যায় থাকায় ছয়টি ব্যাংক হচ্ছে- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় এসব ব্যাংককে জামানত ছাড়াই টাকা ধার দিচ্ছে এবং লেনদেন হিসাব চালু রাখার কারণেই মূলত নতুন ঋণ দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সম্প্রতি ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামি ধারার ১০ ব্যাংকে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে আমানত ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা, যা গত মার্চে কমে হয়েছে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে তাদের আমানত কমেছে ৪ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। অন্যদিকে তখন এসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে তাদের দেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা।
এদিকে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) ৯২ শতাংশ হলেও গত মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ শতাংশ, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৯৬ শতাংশ। এতে এসব ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য ৫ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৬০৫ কোটি টাকা। তারল্য কমেছে ৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত মে পর্যন্ত ওই পাঁচ ব্যাংকে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ১৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ৬১ কোটি টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ২২৭ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।
শাহজালাল ও এক্সিম ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকে সংকট চললেও তারা আগ্রাসী ঋণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। গ্রাহকের আমানতের টাকা না থাকায় এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেয়া ধারের টাকায় তারা ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। এতে ইসলামি ধারার সব ব্যাংকের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। একই রকম বক্তব্য দেন আল-আরাফাহ্ ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা।