29 C
Dhaka
Wednesday, October 2, 2024

ঢাবি শিবিরের সভাপতি পরিচয় দেয়া কে এই সাদিক কায়েম, কেন এত আলোচনায়

এক যুগেরও বেশি সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সরব উপস্থিতি জানান দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। মো. আবু সাদিক কায়েম নামে এক শিক্ষার্থী নিজেকে শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করে এই পরিচয় প্রকাশ করেন তিনি। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

জানা গেছে, সাদিক কায়েম ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সমন্বয়কের তালিকায় নাম না থাকলেও জুলাই মাসে চলা ছাত্র আন্দোলনে সামনের কাতারেই ছিলেন সাদিক কায়েম।

ফেসবুক পোস্টে কায়েম বলেন, ফ্যাসিস্ট শোষণ শুধু ছাত্ররাজনীতি নয়, রাজনীতির সংজ্ঞাই পালটে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি থাকে না। বিরাজনীতি ফ্যাসিবাদের ভাষা। ফ্যাসিবাদ ছাড়া সকল বাদ, ইজম ও রাজনীতি ফ্যাসিবাদে অনুপস্থিত থাকে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি নাই, শুধু ফ্যাসিবাদই আছে। টেন্ডারবাজি, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ফাঁসি, ধর্ষণ, রাহাজানি, দুর্নীতি এসব রাজনীতি না। এগুলো ফ্যাসিবাদ।

পোস্টে তিনি চব্বিশের চেতনা নিয়ে আগামী দিনে ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হবে উল্লেখ করে লিখেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গত ১৬ বছরের ভয়ঙ্কর দিনগুলো কিংবা তারও পূর্বের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো রাজনীতির প্রতি তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করেছিল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। কিন্তু চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সমস্ত ভুল ভেঙে দিয়েছে। রাজনীতি সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন সচেতনতা। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি।

আরো পড়ুন  স্কুলে ঢুকে ছুরিকাঘাতে ৪ শিক্ষার্থীকে জখম করলেন এক নারী

তিনি আরও লিখেন, ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিতে মত-দ্বিমত হবে, যুক্তির পাথরে সবাই বিক্ষিপ্ত হবে, কিন্তু কোনো হকিস্টিক কিংবা স্ট্যাম্প থাকবে না। কোনো গেস্টরুম, গণরুম থাকবে না। চব্বিশের আকাঙ্ক্ষাকে বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবে এই ছাত্ররাজনীতি। মধুতে ভিন্নমতের কেউ চা খেলে অপর পক্ষের কেউ তেড়ে আসবে না। আমরা জানি এই স্বাধীনতার জন্য শহিদ হয়েছে রাজনৈতিক দলসংশ্লিষ্ট এবং দলের আওতামুক্ত রাজনীতি সচেতন ছাত্র-জনতা। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানোর চেয়ে বড় রাজনীতি, আর কোনো রাজনীতিই না। আমরা চাই সেই রাজনীতির আদর্শে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপক ইতিবাচক সংস্কার হবে।

ছাত্র সংসদ সক্রিয় করার দাবি জানিয়ে পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, একাডেমিক পরিবেশে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ছাত্রসংসদ-ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি। গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমতের প্রতি থাকবে সম্মান, কিন্তু কেউ যেন স্বৈরাচারি না হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে রাখতে হবে সজাগ ও পূর্ণদৃষ্টি। এই রাজনৈতিক সংস্কারে অবশ্যই চব্বিশের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে, তা না হলে ভেস্তে যাবে আমাদের এই স্বাধীনতা। আমরা চাই ছাত্ররাজনীতির সংস্কার গবেষণা, পলিসি ডায়ালগের মধ্যদিয়ে তা বাস্তবায়িত হোক। এ লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

আরো পড়ুন  কলেজে নিষিদ্ধ হলো ‘খোলামেলা’ পোশাক

পোস্টের শেষে পরিচয় উল্লেখ করে লেখা হয়, সাদিক কায়েম, সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে পরিচয় প্রকাশের পর এ নিয়ে ফেসবুকজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। রোববার একটি স্ট্যাটাসে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান লিখেছেন, ‘ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে, পরিচয় জুলাইয়ের ২৫ তারিখ থেকে, তারপর নিয়মিতই কথা হতো।

এছাড়া হঠাৎ সালমানের শিবির পরিচয়ে অবাকও হয়েছেন জুলকারনাইন। তিনি লেখেন, সালমানের প্রকৃত নাম শাদিক কাঁইয়ূম এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি। অবশ্যই অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি।

এদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম শনিবার এক পোস্ট দিয়ে বলেন, সাদিক কায়েম শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি। দুয়েকদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

আরো পড়ুন  ঢাবির ক্যান্টিনে ‘খাসির মাংসের নতুন রেসিপি’, ঝোলের সঙ্গে টাকা!

জানা গেছে, সাদিক কায়েমের বাবা জেলা শহরের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তার ছোট ভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ছোটবেলা থেকেই সাদিক খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদরাসা থেকে দাখিল এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে।

সাদিক কায়েম পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি, হিল সোসাইটি সাবেক প্রতিষ্ঠাতা, সেভ ইয়ুথ-স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ভায়োলেন্সের সাবেক ফ্যাসিলিয়েটর, সূর্যসেন হল অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল সায়েন্সের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইয়ুথ ইনিশিয়াটিভ-বিওয়াইআইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট কোঠাবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ শুরু থেকে দাবি করে আসছিল, এ আন্দোলনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে জামায়াত-শিবির। তবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের এ দাবির ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

সর্বশেষ সংবাদ