উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগ থেকে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রংপুর বিভাগের সাধারণ ছাত্র-জনতা।
শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাবির টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধন থেকে রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি জানান। সেগুলো হলো- তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন; জাতীয় বাজেটে ন্যায্য বরাদ্দ; বিশেষ আর্থিক বরাদ্দসহ গ্যাস সংযোগ প্রদান; বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পায়ন এবং রংপুর বিভাগ থেকে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ প্রদান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা আঞ্চলিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। মঙ্গাপীড়িত রংপুরের প্রায় সব জেলাই বন্যার সময় কষ্টে দিন পোহায়। বছরে দুই বার বন্যা হয়। খরায় পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যহত হয়। জাতীয় উন্নয়ন বাজেটে ২ শতাংশ বাজেটও একটা পুরো বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকে না। অথচ সব থেকে বেশি বরাদ্দ থাকা দরকার এই জনপদের জন্য। শিল্পায়নের বুলি সব সরকারই আওড়াচ্ছেন গত পঞ্চাশ বছর ধরে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নাই এখনো।
রংপুর বিভাগ ছাত্র-জনতার মুখপাত্র মিফতাহুল মারুফ বলেন, দেশে গার্মেন্টস্ শিল্পের বড় জনশক্তি আসে রংপুর অঞ্চল থেকে অথচ সেই অঞ্চলেই কোনো শিল্পায়ন নাই, গ্যাস সংযোগ নাই। বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত ছিলো এ জনপদের মানুষ। কাজেই এখন সরকারের উচিত হবে বিশেষ বিবেচনায় স্পেশাল বরাদ্দ নির্ধারন করে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে হাত দেয়। আর তা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে। বন্যা ও খরা মোকাবিলা করতে ও পানি সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে তিস্তা মহাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে হবে। এর জন্য উচিত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, শহীদ আবু সাইদের রক্তের প্রতি ন্যায়বিচার করুন। যে জনপদে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ সেই অঞ্চল থেকে একজন প্রতিনিধিও নেই উপদেষ্টা পরিষদে। এটি আরেক বৈষম্য। বিগত সময়ে সরকারের কোনো ব্যক্তিই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয় নাই। কাজেই রংপুর বিভাগ থেকে অন্তত একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিত হবে। আর এটা এজন্য যে যিনি বৃহত্তর রংপুরের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানেন না তিনি এর উন্নয়ন করতে পারবেন না। কাজেই এমন মানুষ দরকার যিনি সেখানের প্রকৃত বাস্তবতা জানেন ও বোঝেন। সুতরাং প্রকৃত কাজের জন্যই রংপুর অঞ্চল থেকে সরকারে প্রতিনিধি দরকার।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবহেলিত রংপুর বিভাগ থেকে কোনো উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন অনেকে বলতে পারেন আমরা স্বার্থ খুঁজছি। আমি বলতে চাই, আমরা যদি স্বার্থের দিকে তাকাতাম তাহলে কোনো বিভাগ থেকে কতজন উপদেষ্টা হয়েছে সেটার লিস্ট দেখাতে আসতাম। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, অবহেলিত উত্তরবঙ্গের মাটি ও মানুষের যুগ যুগ ধরে চলে আসা সমস্যাকে ঘুচতে হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ দরকার।
তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে বেড়ে উঠা ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া অনেক যোগ্য তরুণ-প্রবীণ রয়েছেন যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযোগ্যভাবে দক্ষতার সঙ্গে গিয়ে নিতে সক্ষম। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবি সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের এই কর্মসূচি আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করবে এবং আরও বেশি প্রতিবাদী আকার ধারণ করবে।
ঢাবির আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী গালিব আহমেদ শিশির বলেন, আমরা সবসময়ই দেখে এসেছি ১৯৭১ থেকে ২০২৪ রংপুরবাসী শুধু রক্ত দিয়ে এসেছে কিন্তু এরপরেও তারা সবসময়ই অবহেলিত রয়েছে। রংপুর বিভাগের বার্ষিক বাজেটেও উন্নয়ন খাতে কোন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
তাছাড়া, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাজেট ছিলো মাত্র ১ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলিতেও আমাদের বিভাগের কেউ নেই যিনি আমাদের পক্ষ থেকে কথা বলবেন। দীর্ঘদিন ধরে আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শুনে আসলেও সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই, বর্তমান সরকারের কাছে আমরা আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ আলম বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা রংপুরবাসী বন্যার সম্মুখীন হয়ে আসছি৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদের কোন দাবি মেনে নেয়নি। এমনকি আমাদের বিভাগের উন্নয়নে বাজেটও প্রদান করেননি। আমরা বৃহত্তর রংপুর থেকে তরুণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোগ্য ও নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন নেতাদের দেখতে চাই এবং অতিদ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)-এর লেকচারার রাজীব মণ্ডলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক আবিদ হোসেন রাফি, অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান, রংপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।