22 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

প্রশাসনে রাজনীতি আনেন সিএসপি আমলারা

দেশের আমলাতন্ত্রের ভিত্তি নির্মাণ হয়েছিল সিভিল সার্ভিস পাকিস্তান তথা সিএসপি কর্মকর্তাদের হাত ধরে। স্বাধীনতার আগে প্রশাসনে রাজনীতিবিদদের প্রভাব কম থাকলেও স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে উঠেন সিএসপি আমলারা। স্বাধীনতার পর দেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালনকারী প্রথম সাত সিএসপি কর্মকর্তার মধ্যে ছয়জনই অবসরের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। অবসরের পরও নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করে জনপ্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দলীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ আছে অনেকের বিরুদ্ধে। এমন তথ্য পাওয়া যায় বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমামকে আওয়ামী সরকারের সময়ে প্রশাসনকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এইচটি ইমাম সিএসপিতে যোগ দেন ১৯৬২ সালে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫-এর ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর শেখ হাসিনা তাকে কেবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন  এমপি আনারকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে

মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে এইচটি ইমামের উত্তরসূরি ছিলেন এসএম শফিউল আজম। স্বাধীনতার আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যসচিব ছিলেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিল্প, বাণিজ্য, পাট, বস্ত্র, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিকল্পনা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর প্রশাসনে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ধরে রাখতে সক্ষম হন শফিউল আজম। এসএম শফিউল আজম ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন।

দেশের তৃতীয় কেবিনেট সচিব ছিলেন আবদুল মোমেন খান। ১৯৫৪ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। আবদুল মোমেন খান ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-২৭ আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের চতুর্থ কেবিনেট সচিব ছিলেন মোহাম্মদ কেরামত আলী। ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম ব্যাচের সিএসপি অফিসার ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি যথাক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ডাক-তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

আরো পড়ুন  ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি বিএনপির

দেশের পঞ্চম মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন সিএসপি কর্মকর্তা এম মহবুবউজ্জামান। তিনি ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে তার উত্তরসূরি ষষ্ঠ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মুজিবুল হককে পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। দেশের সপ্তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিএসপি কর্মকর্তা এম কে আনোয়ার ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন । মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি বিএনপি সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এম কে আনোয়ার।

আরো পড়ুন  জামায়াত আমিরের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

দলের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকাশ্যে আমলাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রথম নজির তৈরি করেন ১৯৬৫ ব্যাচের সিএসপি কর্মকর্তা মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ১৯৯৬ সালে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলেন কয়েকজন সরকারি আমলা। রাষ্ট্রীয় পদে থেকে রাজনৈতিক দলের আনুগত্য প্রদর্শনের পুরস্কার হিসেবে ১৯৯৭ সালে তাকে পরিকল্পনা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

সর্বশেষ সংবাদ