রমনায় নিজেস্ব বাসভবনে মতিয়া চৌধুরীর জানাজা সম্পন্ন হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে জানাজা হয়।
এর আগে মতিয়ার চৌধুরীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স তার বাসভবন রমনা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে পৌঁছায়। সেখানে শেষ বিদায় জানাতে ভিড় করেন তার ভক্ত-অনুসারী ও স্বজনরা। এরপর সেখানে জানাজা সম্পন্ন হয়।
মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের জন্য নতুন জায়গা চাওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের কাছে। জায়গা পেলে সেখানে দাফন করা হবে, না পেলে তার স্বামী বজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের দাবি থাকলেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তার মরদেহ সেখানে নেওয়া হবে না বলেও জানান মাসুদুল।
এদিকে বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১১টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মতিয়া চৌধুরী মারা যান। এভারকেয়ার হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী প্রশ্নবিদ্ধ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর একাদশ জাতীয় সরকারের মেয়াদে সংসদের উপনেতার দায়িত্বে ছিলেন বেগম মতিয়া।
মতিয়া চৌধুরীর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুর জেলায়। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থি রাজনীতি দিয়ে। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সদস্য ছিলেন। ইডেন কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া চৌধুরীকে জেলে থাকা অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কৃষক সমিতির সদস্য করা হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সেখানকার নারী নেত্রীদের নিয়ে জনমত তৈরি করেন। এভাবেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, যোগাযোগ এবং আহতদের শুশ্রূষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে সংসদ সদস্য পদ হারান তিনি।