প্রায় দুই বছর ধরে জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের মাটিতে আসতে পারেননি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
মিথ্যা দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেশের বাইরে কাটাতে হয়েছে তাকে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সিরাজগঞ্জবাসী প্রহর গুণতে থাকেন- কবে আসবেন প্রিয় নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তারই আগমনের পথ চেয়ে রয়েছেন জেলার বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও লাখ লাখ ভক্ত।
অবশেষে দুই বছরেরও বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সিরাজগঞ্জে আসছেন বিএনপির শীর্ষ এ নেতা। পাড়া-মহল্লায় মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর কথা।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে বৃস্পতিবার বিকেল ৩টায় বাজার স্টেশন চত্বরে অনুষ্ঠেয় সম্প্রীতির সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করার কথা রয়েছে টুকুর।
বিএনপির একাধিক নেতা, কর্মী ও সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগে যেদিন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তখন থেকেই অনেক নেতাকর্মী নামাজ পড়ে দোয়া করেছেন। মানুষের চাওয়া ছিল, তিনি যেন সুস্থ অবস্থায় সিরাজগঞ্জে ফিরে আসেন। অবশেষে হাসিনার সরকারের পতনের পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। গত ১০ অক্টোবর তার আসার কথা শুনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জবাসী। অবশেষে বৃহস্পতিবার তিনি সিরাজগঞ্জে আসছেন। লাখো মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর আলম মুন্সী বলেন, গণমানুষের নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর আসার খবরে গ্রামে গ্রামে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। শিয়ালকোল ইউনিয়ন থেকেই অন্তত ১০ হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে যোগ দেবেন সমাবেশে।
সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ আহমেদ সবুজ বলেন, প্রিয় নেতার আগমনে উৎফুল্ল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আমাদের ১৮টি মূল ইউনিট ছাড়াও কলেজের সাতটি ইউনিট রয়েছে। সব ইউনিটের নেতাকর্মী মূল দলের সঙ্গে মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেবে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনার সরকার প্রতিহিংসার কারণে প্রিয় নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে দেশ ছাড়া করেছিল। তিনি দীর্ঘদিন পর নিজের জেলায় আসবেন। হাজারো মানুষ প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য সমাবেশে আসবেন। সমাবেশটিকে সফল করার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবু বলেন, লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ হবে। দীর্ঘ ১৫ বছর কথা বলা যায়নি। ভোট দেওয়া যায়নি। আজ কথা বলা যায়। সিরাজগঞ্জের মাটি ও মানুষের নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তাই সর্বস্তরের মানুষই তাকে দেখার জন্য উন্মূখ হয়ে আছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জের গণমানুষের নেতা।
দীর্ঘদিন পর নিজ জেলায় ফেরার অনুভূতি জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দুই বছর আমার দেশের মানুষ আর দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে যেতে পারি নাই। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি নাই। আমার দাদা-দাদি ও বাবা-মার কবর জিয়ারত করতে পারি নাই। দীর্ঘদিন সশরীরে দেখা হয় নাই আমার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে। আমি দেশে ফিরতে পারছি। এতে আমি আবেগে আপ্লুত, আমি বাকরুদ্ধ।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের কয়েলগাঁতী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী ছিলেন। সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী এম এ মতিন তার ভগ্নীপতি। তিনি ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ২০০১ সালে সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে দলটির নীতি নির্ধারণী পরিষদ স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য পদে দায়িত্বরত রয়েছেন।