ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় বুধবার (১৬ অক্টোবর) এক সম্মুখ যুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে তারা। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেট যৌথ বিবৃতিতে সিনওয়ার নিহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। এর আগে তার মরদেহের দাঁত ও ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্ত মরদেহটি সিনওয়ারের বলে নিশ্চিত হওয়ার দাবি করে ইসরায়েল।
এরপর হামাস নিশ্চিত করেছে যে নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
এর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক যোদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে ইসরায়েলি সেনারা। তখনই ধারণা করা হয়, তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, এক সম্মুখ যুদ্ধে তারা গাজায় তিন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। তার মধ্যে একজন হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতো দেখতে। কিন্তু তখন তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করে ইসরায়েলে পাঠায়। সেই পরীক্ষার ফলাফল হাতে এলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় আইডিএফ।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার একটি ভবনের নিচতলায় বুধবার একদল হামাস যোদ্ধাদের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। এ সময় সম্মুখ গোলাগুলি শুরু হয়। এতে হামাস যোদ্ধারা টিকতে পারেনি। কেউ কেউ পালিয়ে যায়। অপরদিকে একের পর এক গোলায় ভবনটির এক পাশ ধসে পড়ে। পরিস্থিতি যখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে তখন ভবনে প্রবেশ করে ইসরায়েলি সেনারা অবাক হয়ে যান। তারা অন্যদের সঙ্গে সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধার করেন।
ইসরায়েলের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আইডিএফ সৈন্যরা সিনওয়ারকে টার্গেট করে হামলা করেনি। তিনি যে ভবনটিতে থাকতে পারেন তা জানা ছিল না। ঘটনাটি আকস্মিক।
ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার; আইডিএফ এমনটিই বিশ্বাস করে। এর প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ইসরায়েলের বিপক্ষে হামলা জোরদার, যোদ্ধা তৈরি, গাজার সীমান্তে অস্থিশীলতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আগে থেকেই ইয়াহিয়া সিনওয়ার কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন।
হামাসের পলিটব্যুরোার প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ নিহতের পর তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন সিনওয়ার। স্থানীয়ভাবে আবু ইব্রাহিম নামেও পরিচিত সিনওয়ার। তিনি ১৯৬২ সালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ১৯ তখন ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রথমবার ইসরায়েল তাকে গ্রেপ্তার করে।
কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ২৫ বছর বয়সে ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি হামাসের নিরাপত্তা শাখা আল মাজদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাখার সদস্যরা তথাকথিত নৈতিকতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের এবং ইসরায়েলের সাথে সহযোগিতা করার জন্য সন্দেহভাজনদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন চালায়।
১৯৮৮ সালে তাকে ইসরায়েলি বাহিনী আবারও গ্রেপ্তার করে। বিচারে সিনওয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হন। কিন্তু ২০১১ সালে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা একজন ইসরায়েলি সৈনিকের বিনিময়ে মুক্তি পান ১ হাজার ২৭ ফিলিস্তিনি বন্দি। তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার; আইডিএফ এমনটিই বিশ্বাস করে। এর প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বলা হয়, তিনিই ছিলেন সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড।