17 C
Dhaka
Tuesday, December 10, 2024

জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে রোধে কাজ করা জরুরি : ড. আদিল

বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলার চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করা জরুরি। আমাদেরই আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিবেশের বিপর্যয় ও ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় শীর্ষক একটি সেমিনার এসব কথা বলেন তিনি।

ড. আদিল আরও বলেন, আমাদের নতুন বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে হলে রাজপথ থেকে কাজ শুরু করতে হবে। আমাদের নগরায়ণের কৌশল পাল্টাতে হবে এবং তরুণদের দখলদারদের মুখোমুখি হয়ে একটি সুন্দর পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রতিচ্ছবির সভাপতি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি)-এর প্রেসিডেন্ট, প্রফেসর ড. আদিল মোহাম্মদ খান। সেমিনারটিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. এসএম মোস্তফা আল মামুন; ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল; ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. এম মাহবুব হোসাইন এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জিন বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মাহফুজুল কাদের (হেলাল)। সেমিনারটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

আরো পড়ুন  শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

সেমিনারের মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন- তেল, গ্যাস এবং কয়লার ব্যবহার থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের ফলে যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা রিনিউয়েবল এনার্জি এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ ৯০% হ্রাস করার একটি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমেই সম্ভব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, আমাদের খুব সহজ ভাষায় পরিবেশকে বুঝতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনকে বুঝতে হবে এবং এর বিরূপ প্রভাবকেও উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই আমরা একজন পরিবেশবিদ হতে পারব। বাংলাদেশকে নিয়ে করা সব পরিকল্পনাকে শুধু পরিকল্পনা হিসেবে ফেলে না রেখে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে; এর জন্য এসব অঞ্চলের জন্য গঠিত পরিকল্পনাকে কার্যকরী পদক্ষেপের আওতাভুক্ত করতে হবে।

ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. এসএম মোস্তফা আল মামুন বলেন, আমার পাঠদানের বিষয়ের সঙ্গে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি যুক্ত না থাকলেও আমরা সবাই পরিবেশ বিপর্যয়ের ভুক্তভোগী। আমরা নিজেদের বিলাসিতার জন্য পরিবেশকে যেভাবে নষ্ট করেছি সেটি উন্নয়নে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।

আরো পড়ুন  বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস ফের চালু করতে সভা

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. এম মাহবুব হোসাইন বলেন, আমরা জলবায়ু ইস্যুতে কম্প্রোমাইজ করছি বটে তবে একেবারে ছেড়ে দিলে চলবে না। পরিবেশকে বাঁচাতে চাইলে আমাদের স্বভাবকে পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের আচরণের পরিবর্তনই পারবে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে।

বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনিয়াস নলেজ (বারসিক)-এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফলস্বরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় চলে আসে এবং বস্তিতে বসবাস করতে শুরু করে। এই জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়, তাই তাদের কথা মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব নগরায়ণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুবসমাজকে এই জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করতে হবে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে এরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট)-এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের দেশের ৫-১০% মানুষ নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করে। তাদের যাতায়াতে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি যেভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে তার ফল ভোগ করছে প্রান্তিক মানুষজন। আমাদের এই জীবাশ্ম জ্বালানির সঠিক প্রতিস্থাপন নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ গঠন করতে হবে।

আরো পড়ুন  জেলা কমিটি করছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘সিসিএস’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০২৩ সালে নভেম্বর মাসে গৃহীত এনার্জি মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি)-তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেওয়া হয়নি। আমাদের সত্যিকার অর্থে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার বাড়াতে হলে জ্বালানি মাস্টারপ্ল্যানে সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে। অন্যথায় বড় বড় এসব পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কিংবা জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নয়ন কোনোটাই সম্ভব হবে না।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার মো. নাছির আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের অনেক বেশি গবেষণা প্রয়োজন, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কি পরিমাণ ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ হতে পারে তা বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে নিরুপণ করতে হবে। ফরমাল এবং ইনফরমাল সব সেক্টরে জলবায়ু শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সাসটেইনেবল রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেড (এসআরসিএল)-এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আবু জুবায়ের বলেন, আমার মতে যুবসমাজের পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তরুণ সমাজকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমাধানকল্পে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।

এছাড়া সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাপস গবেষণা সহকারী ও প্রতিচ্ছবির প্রতিনিধিরাসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার সদস্যরা।

সর্বশেষ সংবাদ