শেখ হাসিনা দেশে থাকা তার সমর্থকদের আন্দোলন করার জন্য উসকানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমি তাদের বলতে চাই, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য আর ফিরতে পারবেন না, শুধুমাত্র ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়ানোর জন্যই ফিরবেন। যারা এখনও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উসকানিতে জনজীবন দুর্বিষহ করার চেষ্টা করছেন, তাদেরকে সাবধান করে দিতে চাই।
রোববার (২০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তা না করে দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন।
৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর স্নাইপার দিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ করে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তার সকল নেতাকর্মী এবং পুলিশ বাহিনীকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে কাউকে না জানিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের কারণে সেদিন অনেক পুলিশ সদস্য মারা যায়। এ আন্দোলনে যত পুলিশ মারা গিয়েছে এর দায় শেখ হাসিনার।
এ ছাড়া তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে সরকারি হিসাবে ৪৪ জন পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৫ জনকে। তবে সরকার পতনের পর ধর্মঘটে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা রাজারবাগে অবস্থান নিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য হত্যার অভিযোগ করেছিলেন। তারা এসব হত্যার বিচার দাবি করছিলেন।
বর্তমানে সংবাদমাধ্যম যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে, ইতিহাসে তা হয়নি বলেও দাবি করেন তথ্য উপদেষ্টা। ক্ষমতাচ্যুত সরকার সমর্থকদের গণমাধ্যম থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। তার ভাষায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আর ফ্যাসিবাদের পক্ষে লেখা এক কথা নয়।
তা ছাড়া তিনি বলেন, আবারও বলতে চাই, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুন। কিন্তু জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না, ছাত্র-জনতার রক্তের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না।
আন্দোলনের সময় তাদের সংবাদ প্রচার করতে দেওয়া হয়নি, সংবাদ সংগ্রহের কারণে সংবাদমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখনও সেই সাংবাদিকদের নানা প্রকার চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। সে হাউসগুলোতে ফ্যাসিবাদের এজেন্টরা রয়ে গেছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে। সেই গণমাধ্যমের মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করে জনগণের সামনে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ, আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই। ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না।
গণমাধ্যম থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং আকাঙ্ক্ষা পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের কারণ। এখনও আমাদের অনেক ভাই-বোনেরা আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এখনও অনেকে শহীদ হচ্ছে অথচ আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে সেই শহীদ এবং আহতদের কথা দিনকে দিন কমে আসছে। জনগণের স্মৃতি থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু গণমাধ্যম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নিহত হিসেবে উল্লেখ করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবাসী তাদেরকে শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, সেখানে গণমাধ্যম তাদের শহীদ বলতে কার্পণ্য করছে।
গণঅভ্যুত্থানে রক্তের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন এই ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটেন তথ্য উপদেষ্টা। প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, ক্লাবের সাবেক ও বর্তমান নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও উপদেষ্টার পাশে ছিলেন।