ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থেকে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে মুক্তি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিন দফা দাবিতে চার ঘণ্টা অবরোধের পর ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে নীলক্ষেত ও সাইন্সল্যাব সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার সময় রাজধানীর সাইন্সল্যাব ও নীলক্ষেত মোড় থেকে সরে যান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় সাইন্সল্যাব থেকে তিন দফা দাবি পেশ করে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন সাত কলেজ সংস্কারের প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান।
দাবিগুলো হচ্ছে- সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে। সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধু একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবেন। সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন, যাতে করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।
শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে আমরা আবার রাজপথে নামব। দাবি আদায় করতে গিয়ে যদি আমাদের ৫/৬টা লাশও পড়ে তাতেও আমরা দ্বিধা করব না।
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করেন সাত কলেজের প্রায় এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। ফলে মিরপুর সড়ক ও এলিফ্যান্ট রোডে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ জনগণ। আন্দোলনের শুরুতে সাইন্সল্যাবে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হলেও পরে নীলক্ষেত মোড়েও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে সাত কলেজকে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করলেও সেই লক্ষ্যে উন্নয়ন হয়নি। বিভিন্ন সময় স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাবে ভুগছেন তারা। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, নেই সুনির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার, সিলেবাস নিয়ে ধোঁয়াশা, তীব্র সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ত্রুটিযুক্ত ফল, রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়াসহ নানা সমস্যা।
সাত কলেজ সংস্কারের প্রতিনিধি ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা কালবেলাকে বলেন, আমাদের শিক্ষক ও শ্রেণি সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। আমাদের একাডেমিক কোনো ক্যালেন্ডার নেই। প্রথম বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত একই রুমে বসে ক্লাস করেছি। অধিভুক্তির এই সিস্টেমে আমরা আর চলতে পারছি না।
তিনি বলেন, যে আশা নিয়ে সাত কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম, সেশনজট আর অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে তা ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে। সুতরাং সাত কলেজকে নিয়ে একটি সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে। আর যতক্ষণ না আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হচ্ছে আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।
সরকারি বাঙলা কলেজের প্রতিনিধি ওমর ফারুক বলেন, অধিভুক্তির পর থেকে সাত কলেজ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে ঢাবি প্রশাসন। শিক্ষাবর্ষের অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী পুনঃভর্তি (শিক্ষাবর্ষে মেয়াদোত্তীর্ণ) হয়ে অনিয়মিত হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক তাদের প্রতি সেশনে ১০ হাজার টাকা জরিমানা নিচ্ছে, যা বাংলাদেশে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। সাত কলেজ তাদের আইডেন্টিটি চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন অতি শিগগির সাত কলেজকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাত কলেজের সংস্কার প্রতিনিধি দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজের কাছে সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারও থেকেই সাড়া না পেয়ে রাজপথে নামেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাবি অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।