33 C
Dhaka
Tuesday, October 22, 2024

মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যুবককে ফ্যানে ঝুলিয়ে নির্যাতন

রাজশাহীর এক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যুবককে এক সপ্তাহ ধরে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। নির্যাতনে যুবকের ডান পা ভেঙে গেছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকার সূর্যোদয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে।

নির্যাতনের শিকার ওই যুবকের নাম তোফাইরুল ইসলাম রাহাত (২৫)।

জানা গেছে, আহত রাহাতকে উদ্ধার করতে গেলে তার স্ত্রী, বোন এবং নিকটাত্মীয়দের আটকে রাখেন নিরাময় কেন্দ্রের মালিক এবং কর্মচারীরা। আহত রাহাত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাড়িতে অবস্থান করলেও ভয়াবহ নির্যাতনের কারণে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

এ ঘটনায় রাহাতের স্ত্রী ফারাজানা আক্তার লাবন্য পবা থানায় গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনের নামে মামলা করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন, নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ফেরদৌস হাসান (৩২), কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শুভ কুমার রনি (২৯) এবং ইমতিয়াজ আহমেদ ডালিম (৪২)। এদের মধ্যে পুলিশ রনি এবং ডালিমকে গ্রেপ্তার করেছে। নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নির্যাতনে ব্যবহৃত লোহার পাইপ এবং চেতনানাশক ইনজেকশনের সিরিঞ্জসহ অন্যান্য আলামত।

আরো পড়ুন  বীমা কোম্পানিতে চাকরির নামে ভয়ংকর জঙ্গি রানা

তবে মালিক ফেরদৌস প্রকাশ্যে থাকলেও পুলিশ তাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি জামিন নেননি বলেও স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, রাহাতের বোন আইনজীবী শিরিন সুলতানা মেঘলা আমাকে ব্ল্যাকমেইল (প্রতারণা) করার চেষ্টা করছেন। তার ভাই রাহাত নিরাময় কেন্দ্রে অন্য মাদকাসক্ত রোগীদের নিয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছিলেন। তাই তাকে সামান্য মারধর করা হয়েছে। এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা।

জামিনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলা হয়েছে শুনেছি। তবে আমি আসামি কিনা সেটি জানি না।

রাহাতের স্ত্রী লাবন্য থানায় দায়ের করা এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ২০ জুলাই তার স্বামী রাহাতকে নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। প্রতি সপ্তাহের রোববার তাদেরকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হতো। কিন্তু কিছুদিন থেকে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ রাহাতের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেয়নি। সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট শনিবার জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাহাতের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করা হয়। অনেক অনুরোধের পর বেলা ১১টার দিকে নিরাময় কেন্দ্রে রাহাতের সঙ্গে তাদের দেখা করার অনুমতি মেলে। এরপর সেখানে রাহাতকে প্রায় জ্ঞানশূন্য অবস্থায় দেখতে পান। তারা ডান পা ভাঙা এবং গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বেধড়ক মারধরের আলামত পান। এ সময় রাহাতকে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে তাদের আটকে রাখেন এবং এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে গোপনে পুলিশকে জানালে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতনের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।

আরো পড়ুন  বাংলাদেশিদের জন্য সহজ হলো ইতালির ভিসা আবেদন

আহত রাহাতের বোন আইনজীবী শিরিন সুলতানা মেঘলা বলেন, আমরা রাজশাহী মহানগরীর ষষ্ঠীতলা এলাকায় বসবাস করি। আমাদের একটি প্লট রয়েছে। প্লটটিতে ডেভেলপার দিয়ে বহুতল ভবন করার কথাবার্তা চলছে। আমরা তিন ভাইবোন। বাবা নেই। আমার ভাই রাহাতও এ প্লটের অংশীদার। বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে রাহাত টাকা পাবে। বিষয়টি জানার পর থেকে নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ফেরদৌস নানা অজুহাতে রাহাতকে টাকার জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে। রাহাত রাজি না হওয়ায় তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি আমাদেরও আটকে রেখে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন  সংগীত শিল্পীসহ ২ জন নিহত, হানিফ বাসের চালক আটক

রাহাতের স্ত্রী লাবন্য বলেন, নিরাময় কেন্দ্রটি একটি টর্চার সেল। আমার স্বামীকে এক সপ্তাহ ধরে ফ্যানে ঝুলিয়ে দফায় দফায় লোহার পাইপ দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। পেটানোর আগে তাকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে জ্ঞানশূন্য করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক আঘাত রয়েছে। এখন তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে তার শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা নিয়ে আমরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছি।

পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ফেরদৌস প্রকাশ্যে রয়েছেন কিনা জানি না। তার ফোন নম্বর খোলা না বন্ধ, সেটিও বলতে পারব না। তবে তাকে আটকের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। দুই আসামিকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতনে ব্যবহৃত লোহার পাইপ এবং চেতনানাশক ইনজেকশনসহ বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ