“শ্রমিকদের ওপর গুলি, জাতীয় ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, মাজার ভাঙা, ‘মব জাস্টিস’, ভিন্নমতের ওপর আক্রমণ চলছে”, বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা পাওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ যেসব কাজ করার কথা ছিল, সেগুলোতে অবহেলা ও শৈথিল্য দেখছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
দেশে নিরাপত্তাহীনতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নিত্যপণ্যের দরে ঊর্ধ্বগতি দেখে তিনি আশঙ্কা করছেন, ‘সত্যিকারের আকাঙ্ক্ষিত’ পরিবর্তন হবে না।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পর্যালোচনা ও জনতার অধিকার প্রসঙ্গে করণীয়’ বিষয়ে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন শিক্ষক নেটওয়ার্কের এই নেতা, যিনি সরকার পতনের ‘এক দফা’ ঘোষণার আগেই গত ২ অগাস্ট সরকার পতনের দাবি করেছিলেন।
আরও পড়ুন: দ্রোহ যাত্রা: প্রাণহানির দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি আনু মুহাম্মদের
৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় তিন মাস পর আনু মুহাম্মদের মূল্যায়ন হল, “গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, যার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।”
তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে গণঅভ্যুত্থানে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস হতে যাচ্ছে। শুরুতেই তাদের করণীয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল যার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।”
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত তাদের দায়িত্ব ছিল আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা, সরকার যা তিন মাসেও প্রকাশ করতে পারেনি।
“নিহতদের পরিবার, আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল সরকারের। কিন্তু সেখানেও অবহেলা, শৈথিল্য দেখছি।”
এই শৈথিল্য দেখে উদ্বিগ্ন আনু মুহাম্মদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, “আবারও কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে?”
তিনি বলেন, “আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সর্বস্তরের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু শ্রমিকদের ওপর গুলি, জাতীয় ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, মাজার ভাঙা, ‘মব জাস্টিস’, ভিন্নমতের ওপর আক্রমণ চলছে।
“কোনো মতামত, লেখা, বক্তব্য, পরিচয়ের কারণে নির্যাতন, নিরাপত্তাহীনতা এগুলো দেখছি।”
গত ১৫ বছরে ‘সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের’ কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ চরম দুর্ভোগে ছিল মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য তিন মাস যথেষ্ট ছিল, কিন্তু সে জায়গায় সরকারকে আমরা হাত দিতে দেখিনি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বলেন, “বার বার এ দেশে অভ্যুত্থান হয়েছে, প্রতিটির পর কিছু প্রাথমিক অগ্রগতি ঘটেছে, কিন্তু কোনোবারেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।”
এতে হতাশ না হয়ে এর কার্যকারণ অনুসন্ধান করাটা জরুরি মত দিয়ে তিনি বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ তাদের স্বার্থে যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়, তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি গড়ে না ওঠে, তাহলে ৭১ ও ৯০ এর মতো ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সুফল থেকেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বঞ্চিত হবে এবং এতে সত্যিকারের আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন হবে না। এজন্য প্রয়োজন সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের সংগঠিত শক্তি ও অবস্থান গড়ে তোলা।‘‘
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবিব বলেন, “আমরা যেন বিগত ১৫ বছরের ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের নিপীড়ন-রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, জুলাই আন্দোলনে ভয়াবহ আক্রমণ, হত্যাযজ্ঞ ভুলে না যাই।
“একইসাথে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা, ন্যায়কে ন্যায়, অন্যায়কে অন্যায় বলা জারি রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলা, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রগতিমুখী সার্বিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জারি রাখতে হবে।”
গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক তাহুরিন সবুরের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক দীপা মজুমদারের সঞ্চালনায় সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনমুন নেসা চৌধুরী, সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের খাজা ওসমান ফারুকী, আইনজীবী হাফিজ আহমেদ, আন্দোলনে নিহত ওয়াসিম আকরামের পরিবারের সদস্য মো. জোবায়ের, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পুষ্পিতা নাথ ও সিয়াম এলাহী বক্তব্য রাখেন।