17 C
Dhaka
Tuesday, December 10, 2024

ট্রাম্পের বিজয় কি বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলা থামাতে পারবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুরো বিশ্বব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রীক হওয়ায় এই নির্বাচন সারা পৃথিবীর জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্বের অর্থনীতি, সংঘাত, বাজার ব্যবস্থা এবং আরও বহুকিছুর ওপর প্রভাব ফেলবে এই নির্বাচনের ফলাফল।

আবার একই সঙ্গে এটিও সত্য যে করোনা মহামারির পর গত চার বছরে পৃথিবীজুড়ে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। গত প্রায় দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ চলছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্স স্পর্শকাতর অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলেও। এছাড়া চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে এবং সেই সঙ্গে নিজেদের সবচেয়ে পুরোনো ও বিশ্বস্ত মিত্র ইউরোপের সঙ্গেও বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

চলতি নির্বাচনের সম্পূর্ন ফলাফল এখনও ঘোষণা হয়নি, তবে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে— তাতে ট্রাম্পই যে বিজয়ী হচ্ছেন, তা নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো— ট্রাম্পের বিজয় কি বিশ্বজুড়ে বিশৃঙ্খলা থামাতে পারবে? কী বলছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা?

ইসরায়েলভিত্তিক গবেষণা ও থিঙ্কট্যাংক সংস্থা ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি তারা একটি জরিপ পরিচালনা করেছিলেন। সেই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশ জানিয়েছেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিপাবিলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখতে চান। তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির কমালা হ্যারিসের পক্ষে মতামত দিয়েছেন মাত্র ১৩ শতাংশ ইসরায়েলি।

আরো পড়ুন  ভিডিও : হাসপাতালেই ডাক্তারকে উত্তম-মধ্যম, কী খুলতে বলেছিলেন তিনি?

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালানোর পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে। সম্প্রতি গাজার পাশাপাশি লেবানন এবং ইরানের সঙ্গেও যুদ্ধে জড়িয়েছে ইসরায়েল। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন স্পষ্টভাবে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে। একসময় ইসরায়েলেও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষের জনমত শক্তিশালী ছিল, কিন্তু এদিকে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।

ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশই বিশ্বাস করেন যে সাম্প্রতিক এই যুদ্ধপরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমালা হ্যারিসের চেয়ে বেশি উপকারী হবেন।

২০২২ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর গত প্রায় তিন বছরে উভয়পক্ষে কয়েক লাখ সামরিক ও বেসামরিক নিহত হয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ এখনও চলছে।

আরো পড়ুন  লেবাননে জাতিসংঘের প্রধান ফটক ধসিয়ে দিল ইসরায়েল

গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “রুশ এবং ইউক্রেনীয়রা নিহত হচ্ছে। আমি যুদ্ধ থামাতে চাই এবং আমার বিশ্বাস, (আমি) পারব। আমার মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে।”

ইউক্রেনীয়রা অবশ্য সে সময় তার কথায় আতঙ্ক বোধ করেছিলেন। দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওলেকসান্দ্র কোভালেঙ্কো নিউইয়র্ক টাইমসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের তখনকার ভয় ছিল যে তিনি হয়তো এমন একটি প্রস্তাব হাজির করবেন, যা পুরোপুরি পুতিনের পক্ষে যাবে। তাছাড়া ট্রাম্প একাধিকবার স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পাঠানোর বিপক্ষে।”

“এখন তিনি ক্ষমতায় যাচ্ছেন। আমরা জানি না যে তিনি তার পূর্বের অবস্থানে অনড় আছেন কি না।”

যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে চীন। কারণ নির্বাচনের আগে একাধিকবার তিনি বলেছিলেন যে ক্ষমতায় গেলে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াবেন তিনি। এখন যেহেতু তার ক্ষমতায় যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র, তাই তিনি তার সেই পুরোনো ঘোষণা বাস্তবায়ন করবেন কি না— সেটি চীনের একটি বড় চিন্তার বিষয়। তবে একদিক থেকে স্বস্তিতে রয়েছে চীন। আর সেটি হলো— তাইওয়ান ইস্যুটি ট্রাম্পের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়। তাই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে এ ইস্যুতে ওয়াশিংটনের যেসব পদক্ষেপ বেইজিংকে সহ্য করতে হয়েছে, সেসব ট্রাম্পের আমলে ঘটবে না বলে আশা করছেন চীনা রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুন  ইসরায়েলের গভীরে সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ বাণিজ্যশুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু ট্রাম্পের বিজয়ের পর তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইউরোপের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান রিফর্মের সহকারী পরিচালক জেশ মেয়ার্স এএফপিকে বলেন, “ইউরোপের অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, তাতে শুল্ক আরোপ করা না হলে অর্থনীতিতে বড় আঘাত আসবে।”

সর্বশেষ সংবাদ