মায়ের অনুপ্রেরণা ও নিজের প্রবল ইচ্ছেশক্তির মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স মাস্টার্স শেষ করা চাঁদপুরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম এখন চাকরি খুঁজছেন শিক্ষকতার।
সমাজের বোঝা না হয়ে চাকরির মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচিয়ে নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সমাজে তিনি শিক্ষার আলো ছড়াতে চান। তাই তাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে সবার সুদৃষ্টি চেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৪ মে) এ প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানিয়েছেন সাইফুল নিজেই।
জানা যায়, সাইফুল ইসলাম হচ্ছেন আবুল কালাম ও রাশেদা বেগম দম্পতির ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে ২য় সন্তান। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়ৈতলী গ্রামের বাসিন্দা। জন্মের ২ বছর আর্থিক জটিলতায় চিকিৎসার অভাবে চোখের আলো নিভে যায় সাইফুলের। পরে মায়ের পরিশ্রম আর বিশ্বাসে পুরো পরিবারে সাইফুলই এখন একমাত্র উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত।
সাইফুলের পিতা কালাম বলেন, ছেলে বড় হয়েছে এবং শিক্ষিতও হয়েছে। চাষাবাদ করে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। এখন বৃদ্ধ হয়েছি। আমি জীবিত থাকতে থাকতে যদি ছেলেটার একটা চাকরি হয়, তাহলে বিয়ে দিয়ে সংসারটা গুছিয়ে দিতে পারতাম।
সাইফুলের মা রাশেদা বলেন, ছেলেকে নিয়ে অনেকেই নানা মন্তব্য করেছে। এখন ছেলে উচ্চশিক্ষিত হওয়ায় আমি মনে করি নিন্দাকারীদের মুখে ঝামা ঘষে দেওয়া হয়েছে। ওর যদি একটা চাকরি হতো তাহলে আমি আরও অনেক খুশি হতাম।
পরিবার সূত্র জানায়, নানা জটিলতায় সাইফুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষাজীবন কেটেছে লক্ষ্মীপুর জেলার দালাল বাজার স্কুলে। আর উচ্চ মাধ্যমিক ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স করেন। সম্প্রতি সেখান থেকেই মাস্টার্স শেষ করে এখন সাইফুল তার ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষকতার চাকরি খুঁজছেন।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, এগিয়ে যেতে প্রয়োজন মনোবল এবং একটু সাপোর্ট। আর সেটা আমি পেয়েছি বলেই নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজেকে আমি উচ্চশিক্ষিত করতে পেরেছি। সোশ্যাল মিডিয়া ও তথ্য প্রযুক্তির অপার ব্যবহারের সুযোগকে কাজে লাগিয়েই আমি শিক্ষাজীবনে পেয়েছি সফলতা। এখন আমার জীবনে আর্থিক সংকট ঘোচাতে একটা চাকরি খুব দরকার। সেটা শিক্ষকতা হলে ভালো হয়।
এসব বিষয় অবগত করা হলে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, সমাজের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণা দিতে সাইফুলের পাশে চাকরিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যদের উৎসাহ ও সাহস জোগানোর জন্য হলেও সাইফুলের ব্যাপারে নমনীয় হয়ে একটি চাকরির পথ করে দিতে সংশ্লিষ্টরা তার প্রতি উদার হবেন এমনটাই মনে করছি।